ল্যাবে তৈরি মুরগির কথা হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি যে আপনি যখন প্রথমবার এ ব্যাপারে শুনেছেন, বেশ অবাক হয়েছিলেন। ল্যাবে উৎপাদিত মুরগি হল জীবিত মুরগি বা ডিম থেকে কোষ ব্যবহার করে ল্যাবে জৈবিকভাবে তৈরি করা হয়। সিঙ্গাপুর হল প্রথম দেশ যেটি ২০২০ সালে ল্যাব উৎপাদিত মাংস বা কালচারড মিট বিক্রির জন্য মার্কিন একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে।
অনেকে এই মাংসটির বেশ প্রশংসা করেছেন। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটির স্বাদ সুস্বাদু এবং অনেকটাই মুরগির মতো। কালচারড মাংসের টেক্সচার পুরোপুরি মুরগির মাংসের মতো নয়, কিছুটা শক্ত।
কিছু জরিপে দেখা যায় যে জীবিত মুরগীর পরিবর্তে ল্যাবে তৈরি মাংস খাওয়ার ব্যপারে মানুষের আগ্রহ অনেক কম। তাদের মধ্যে খুব কম লোকই এই ধরণের মুরগি খেয়ে দেখতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এর স্বাদ নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা মূলত স্বাদ এবং বিভিন্ন পুষ্টি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাষ করা মাংসে প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, শরীর বৃদ্ধির উপাদান এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থা, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সূক্ষ্ম পরীক্ষা করেছে এবং অবশেষে এই মাংস উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে। তারা আরও উল্লেখ করেছে যে এটি মানুষের খাওয়ার জন্য নিরাপদ।
ল্যাবে তৈরি মাংস সারা বিশ্বে খাদ্য ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করবে। একটি খামারে মুরগি এবং অন্যান্য প্রাণী পালন করা ব্যয়বহুল এবং এর জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। কিন্তু ল্যাবে মুরগির কোষ বা টিস্যু দিয়ে অগণিত মুরগির মাংস তৈরি করা যায়। এর মাধ্যমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। আমাদের বেশিরভাগ জমি এই গৃহপালিত পাখি এবং প্রাণীদের জন্য ফসল বা খাদ্য উতপাদন করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে জমিগুলো এখন পশুদের জন্য শস্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো মানুষের খাদ্যে উৎপাদনের জন্য চাষ করা যেতে পারে।
বিশ্ব খাদ্য সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারে তবে তার আগে মানুষকে এই সত্যটি মেনে নিতে হবে যে কালচারড মাংস টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব।