জলভূমি থেকে পাহাড়

by | জানু. 8, 2023 | Explore, Travelling

Traditional Khichuri hobe

A day spent well in Jaflong; the beauty of Sylhet

চট্টগ্রাম থেকে বেশ বড় একটা পথ পার করে সিলেটে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সেখানে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এত এক্সাইটমেন্ট কাজ করেনি আমাদের কারো মধ্যেই। পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যাওয়ায়, আমরা আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী সিলেটের নামকরা একটা রেস্তোরা ‘পাচ ভাই’-এ দুপুরের খাবার খাই। এই রেস্তোরাটি মূলত তাদের বিভিন্ন রকম ভর্তার জন্য নামকরা। এজন্য আমরা সবাই ভর্তা অর্ডার করি এবং প্রতিটি ভর্তা ছিলো অসাধারণ। দুপুরের খাবার শেষে আমরা সিলেট শহর ঘুরতে বের হই, আর পাশাপাশি পরেরদিন জাফলং যাওয়া নিয়েও প্ল্যান করতে থাকি। 

Jaflong

খুব সকালেই আমরা ‘জাফলং’ এর উদ্দেশ্য রওনা দেই এবং শহর ছাড়ার আগেই সকালের নাস্তা করতে একটা লোকাল রেস্তোরায় পরোটা, ডালভাজি, ডিম আর মালাই চা আর্ডার করি। এক কথায় অসাধারণ ছিলো এই মালাই চা। খাওয়া শেষে রওনা করে জাফলং যেতে আমাদের বেশ কয়েক ঘন্টা লেগে যায়, যেহেতু শহর থেকে কিছুটা দূরে।

পানি ও পাহারের নিখুঁত সংমিশ্রণ দেখতে চাইলে এই অসাধারণ জায়গাটি হবে একটা আদর্শ উদাহরণ। এই পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, পানির নিচের নুড়ি পাথরগুলো দেখা যাচ্ছিলো।

আমরা সেখানে কিছু সময় উপভোগ করে অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম যেহেতু সন্ধ্যার আগেই আমাদের সিলেটের মূল শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। এরপর, জাফলং এর কাছেই একটা চা বাগানে যাই আমরা। পথিমধ্যে চিপস, বিস্কুট, ড্রিংকস দিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করি। দুপুরের খাবারের জন্য কোথাও গেলে আমাদের অনেকটা সময় নষ্ট হত। এই ভেবেই আমরা পথেই দুপুরের খাবার সেড়ে নিলাম।

Ratargul in Sylhet

সিলেট পৌঁছে আমরা আরেকটি নামকরা রেস্তোরা ‘পানসী’ তে রাতের খাবারের জন্য যাই। রেস্তোরায় প্রবেশ করা মাত্র সুস্বাদু ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ পাই আমরা, তাই মেনু ঠিক করতে আর সময় লাগেনি। ইলিশ ভাজা, ভাত আর সাথে তাদের মিষ্টিজাতীয় কিছু খাবার অর্ডার করি। রাতের খাবার শেষে আমরা পানসী থেকে বেরিয়ে হোটেলের দিকে যাওয়ার জন্য রওনা দেই। ঠিক তখনই আমরা আগুন পানের সন্ধান পাই। এটি না খেলে আমাদের পুরো ট্রিপই অসম্পূর্ণ থেকে যেত। বিভিন্ন মসলা দিয়ে তৈরির পর পানটিতে আগুন ধরিয়ে দ্রুত মুখের ভেতর পুরে দেওয়া হয়। এটাই এই পানের বিশেষত্ব। প্রথমে সঙ্কিত থাকলেও, পরে এতই ভালো লাগে যে আমি আরেকটি খাওয়ার লোভ সামলে উঠতে পারিনি।

পরদিন সকালে সিলেটে প্রচলিত কোয়েলের মাংস দিয়ে নাস্তা করে ‘বিছানাকান্দি’র উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ওখানে বেশ কিছুক্ষণ থেকে একটা লোকাল রেস্তোরায় দুপুরের খাবার খাই। সময় কম থাকায় ওইদিনই আমরা ‘রাতারগুল’ যাই এবং নৌকা ভ্রমণ করি। ‘রাতারগুল’ এর দৃশ্য নৌকায় ঘুরে দেখতে সত্যিই অসাধারণ লাগে। 

আমরা সিলেটের ‘সাতকরা’র নাম অনেক শুনেছি এবং সিলেটের মানুষ ‘সাতকরা’ দিয়ে গরুর মাংস রান্না করে। তাই আমরা রাতের খাবারের জন্য রেস্তোরা খুঁজতে থাকি, যেখানে ‘সাতকরা’ দিয়ে গরুর মাংস খেতে পারবো। ভাগ্যক্রমে আমরা সেটা পেয়েও গেলাম। ‘সাতকরা’ কিছুটা টক জাতীয় ফল বলেই জানতাম আমি, তাই বেশ সন্দিহান ছিলাম মাংসের সাথে এর স্বাদ কেমন হবে তা নিয়ে। কিন্তু খাবারটি খাওয়ার পর ‘সাতকরা’ সম্পর্কে আমার ধারণা বদলে গেল। সবথেকে বড় স্বস্তির ব্যাপার ছিলো এটাই যে, সিলেট ট্যুরে যেয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবগুলো খাবার খাওয়ার ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে। পরদিন সকালে অনেক স্মৃতি, ছবি ও ক্লান্ত চেহারা নিয়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করি আমরা।

ভ্রমণ আমাদের মানসিক ক্লান্তি দূর করে এবং পাশাপাশি নতুন জায়গার সংস্কৃতি, জীবনধারা ও খাদ্য সম্পর্কে শিখতে সাহায্য করে। যেহেতু প্রতিটি জায়গার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই সেসব জানতে ও বুঝতে, যতটা সম্ভব আমাদের নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখা উচিত।

Related Post
রেমা-কালেঙ্গা

রেমা-কালেঙ্গা

মাঝরাতে বৃষ্টির টিপটিপ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। সকালের বাসে হবিগঞ্জ যাওয়ার কথা। বৃষ্টি হলে...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!