Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /var/www/wp-includes/functions.php on line 6114
সুসং দূর্গাপুর | The Diniverse

সুসং দূর্গাপুর

by | জানু. 14, 2023 | Travelling

Traditional Khichuri hobe

Susang Durgapur is a unique example of cultural variation

আমাদের ময়মনসিংহ ট্যুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল সুসং দূর্গাপুর ভ্রমণ। এটি একটি পারিবারিক ট্যুর ছিল। জায়গাটা যথেষ্ট নিরাপদ। দূর্গাপুর একটি উপজেলা যা নেত্রকোণা জেলার অন্তর্ভুক্ত। পাহাড় ও নদী পরিবেষ্টিত এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির একটি অসম্ভব সুন্দর নিদর্শন এই সুসং দূর্গাপুর। রাতে ময়মনসিংহ থেকে পরদিন সকালে আমরা রওনা হই দূর্গাপুরের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে যেতে হবে ঝারিয়া। ঘন্টা দুয়েক লাগলো পৌঁছাতে। ঝারিয়া নেমে নাস্তা করে হাঁটা দিলাম। ব্রীজের কাজ চলছে। আপাতত হেঁটে পার হওয়া ছাড়া উপায় নেই। ওই পারে যেয়ে সিএনজি ঠিক করে পৌঁছে গেলাম দূর্গাপুরের বিরিশিরিতে।

এই বিরিশিরি হচ্ছে দূর্গাপুর উপজেলার একটি অনিন্দ্য সুন্দর গ্রাম। মূলত দূর্গাপুরে গারো সম্প্রদায়ের মানুষই বেশি। এখানে থাকার জন্যে  YMCA এবং YWCA নামক দুইটা রেষ্ট হাউজ আছে। আমরা YWCA তে উঠেছিলাম। রেষ্ট হাউজে এন্ট্রি হয়েছে আমার নামে। এই ব্যাপারটা খুব ইউনিক লাগলো। ভেতরে একটা আরামদায়ক পরিবেশ। চারদিক সুন্দর সাজানো গোছানো। হাতমুখ ধুয়ে খেতে গেলাম। এতো ভালো রান্না! বিশেষ করে নিরামিষটা। খাওয়া শেষ করে ওদের ঠিক করে দেওয়া রিকশা নিয়ে বের হলাম ঘুরতে। রিকশাচালক বাবুল ভাই, খুব অমায়িক ভদ্রলোক আমাদের গাইডের কাজ করলেন। উনি যতœ করে আমাদের সব ঘুরে ঘুরে দেখালেন।

প্রথমে গেলাম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমীতে। ওখানে জাদুঘরে ওদের সব ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র রাখা আছে। ভালো লাগছিল দেখতে। গারোদের একটা ঘরের নমুনা আর জুম ক্ষেত পাহারা দেওয়ার একটা ঘর খুব সুন্দর লেগেছে। সবচেয়ে ভালো ছিল বেতের একটা হ্যাজাক বাতি। জাদুঘর থেকে বের হয়ে বাইরে কিছুক্ষণ বসলাম। বাইরেটাও খুব সুন্দর। খোলামেলা জায়গা, ফুলের বাগান, খুবই পরিচ্ছন্ন। একটু পর আবার রওনা দিলাম। বাবুল ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন বিরিশিরি ঘাটে। নৌকা করে সোমেশ্বরী নদী পার হতে হবে। আমাদের সাথে সাথে রিকশাও পার হবে নৌকা করে। এই সিস্টেম অবশ্য কুয়াকাটাতেও দেখেছিলাম। আস্ত মোটর সাইকেল নৌকায় উঠে যায়। এখানেও আমরা রিকশায় বসে রইলাম, নৌকা আমাদের নদী পার করে পৌঁছে দিলো বিজয়পুর। আবার রিকশা ভ্রমণ।

বহেড়াতলীতে কৃষক আন্দোলনের পথিকৃৎ শহীদ রানী রাশিমনির স্মৃতিসৌধে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা গেলাম সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী, রানীখং। বলে রাখা ভালো, জামালপুর-শেরপুরের মতো এখানেও সব জায়গায় বেশ নিরিবিলি পরিবেশ পেয়েছি। রাস্তাটা আস্তে আস্তে উপর দিকে উঠে গিয়েছে। ভেতরে খুব বেশিদূর যাওয়ার অনুমতি নেই। যেহেতু মিশনারী, ধর্মগুরুদের প্রার্থনা বা বৈঠকের স্থান।

আবার ফিরতি পথে, এবার গন্তব্য বিজিবি ক্যাম্প। একদম বর্ডারের কাছে। এখানে নৌকা ভ্রমণ করা যায় এবং জিরো পয়েন্ট, মানে ভারতের সীমানা পর্যন্ত ঘুরে আসা যায়। ঘাটে কিছু সময় বসে রইলাম। বাবুল ভাই এবার আমাদের নিয়ে গেলেন কমলা বাগান পাহাড়ে। যদিও আমরা যে সময় গিয়েছি, তখন কমলা পাওয়া যায় না। আমার মেয়ে একা একা পাহাড়ে উঠবে, কারো হাত ধরতে রাজি না। খুব একটা খাড়া না, তাই উঠতে পারছিলো। আমরাও সাহায্য করছিলাম। এরপরই চলে গেলাম বিরিশিরির মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড় দেখতে। যেয়ে তো যাকে বলে মন্ত্রমুগ্ধ! নীচে সবুজ পানি, উপরে নীল আকাশ, আর গোলাপী পাহাড়ের উপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি। পাহাড়টা আসলেই এক অপরূপ সৃষ্টি! অদ্ভুত ও অবর্ণনীয়!

বাবুল ভাইয়ের পথনির্দেশে আমরা আস্তে আস্তে উঠতে শুরু করলাম পাহাড়ের উপর। পায়ে চলা একটা পথ তৈরি হয়ে গিয়েছে। একদিক দিয়ে উঠে আরেকদিক দিয়ে নেমে যাওয়া যায়। যেদিকে তাকানো যায় নীলচে সবুজ স্বচ্ছ পানি। আর পাহাড়ের পাথরগুলো সত্যিকারের গোলাপী আভা ছড়ায়। সবকিছু মিলে অসম্ভব সুন্দর। এদিকে বর্ডারের কাছে হওয়ায় ভারতীয় জিনিসপত্রের অনেক দোকান দেখা যায়। এবার ফেরার পালা। গোধূলিবেলার দূর্গাপুর ঘাটের আকাশে সোনালী সূর্যটা অস্ত যাচ্ছে। একরাশ আলো ছড়িয়ে দিলো যেন। দৃশ্যটা মনে রাখার মতো।

ফেরার পথে আমরা দূর্গাপুর বাজারের শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডারে ঢুকে বিখ্যাত ‘বালিশ মিষ্টি’ খেয়ে নিলাম। বালিশ মিষ্টির জনক গয়ানাথ ঘোষাল।

নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডের ‘গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’-এর স্বত্বাধিকারী গয়ানাথ ঘোষ প্রথম বালিশ মিষ্টি উদ্ভাবন করেন। গয়ানাথের স্বপ্ন ছিল নতুন কোন ধরনের মিষ্টি আবিষ্কার করা। একদিন তিনি দুধের ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে বিশাল একটি মিষ্টি তৈরি করলেন এবং খেতে দিলেন দোকানে আসা ক্রেতাদের। তারা খুব প্রশংসা করলো। এর আকার অনেকটা কোল বালিশের মতো। তাই ক্রেতাদের পরামর্শে মিষ্টির নাম রাখা হলো বালিশ। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে বালিশের নাম। এই মিষ্টি তৈরি করতে প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। মন্ড দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে। এর পর ঠান্ডা করেও চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। বিক্রির সময় বালিশের ওপর দেওয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই। এদিকে আসলে নেত্রকোণার গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে আসল বালিশ মিষ্টি খেতে ভুল করবেন না। আকৃতি অনুযায়ী বালিশের দামও ভিন্ন। অনেক দোকানেই পাওয়া যায় এই বালিশ, তবে গয়ানাথের বালিশ মিষ্টিই অধিক জনপ্রিয়।

মিষ্টিমুখ করে সন্ধ্যার পরপর পৌঁছে গেলাম রেষ্ট হাউজে। সারাদিনের ধকলে শরীরে একরাশ ক্লান্তি! কিন্তু মন জুড়ে সুন্দর কিছু স্মৃতির রেশ রয়ে গেল! ঘুরে বেড়ানোটা এমনই। মনকে কখনোই ক্লান্ত হতে দেয় না।

Related Post
রেমা-কালেঙ্গা

রেমা-কালেঙ্গা

মাঝরাতে বৃষ্টির টিপটিপ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। সকালের বাসে হবিগঞ্জ যাওয়ার কথা। বৃষ্টি হলে...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!