Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /var/www/wp-includes/functions.php on line 6114
বনলতা সেনের শহরে | The Diniverse

বনলতা সেনের শহরে

by | জানু. 14, 2023 | Travelling

Traditional Khichuri hobe

Halti Beel and Chalan Beel are famous in Natore

“আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দুদন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।”

– জীবনানন্দ দাশ

নাটোর বললেই বনলতা সেনের নাম মনে আসেনা এমন খুব কম মানুষই আছে। তবে নাটোরে কি শুধু বনলতা সেনই আছে? নাহ! এই জেলায় দেখার মতো আরো অনেক কিছু আছে।

হ্যা! আমরা এবার নাটোরের পথে, লালমনি এক্সপ্রেসে। প্রথম যখন কুড়িগ্রাম যাই, লালমনি এতো দেরী করেছিল যে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল! এবার আমরাই দোয়া করছিলাম যেন ট্রেনটা দেরীতে আসে। কিন্তু আমাদের হতাশ করে লালমনি মোটামুটি তাড়াতাড়িই চলে আসলো। ফলাফল, নাটোরে যখন আমরা নামি, তখন ভোর সাড়ে চারটা। ঢাকা থেকে যখন যাই, এখানে পুরোই গরম। নাটোর ষ্টেশনে নেমে তো আমার কাঁপাকাঁপি অবস্থা! ভোরের আলো ফুটলে পরে আমরা বের হলাম। নাটোরের ভিআইপি হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে আমরা নাস্তা করতে চলে গেলাম ‘পচুর হোটেলে’। 

নাটোরে যেকোন স্থানীয় মানুষকে ভাল খাবারের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে পচুর হোটেলের কথা। জেলা শহরের একমাত্র হোটেল যা ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। খাবার ভালোই ছিল। আর পুরোই সরগরম হোটেল। 

খাওয়া শেষ করে আমরা রওনা হলাম হালতির বিলের দিকে। বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এখানে পাটুল থেকে খাজুরা পর্যন্ত যে রাস্তা আছে সেটাই বেশি আকর্ষনীয়। এই রাস্তায় যেতেই চোখে পড়বে বড় অক্ষরে লেখা সাইনবোর্ড ‘পাটুল মিনি কক্সবাজার’। বর্ষায় যখন পানিতে পরিপূর্ণ হতে থাকে বিল, তখন এই রাস্তার সৌন্দর্য বাড়তে থাকে। রাস্তায় পানি উঠে যায়। পা ডুবিয়ে হাঁটা যায়। পর্যটকের ভিড় তখন বাড়তে থাকে।

প্রাকৃতিক মাছের প্রজননস্থল হিসেবে হালতি বিল বিখ্যাত। হালতি বিল আত্রাই নদীর সাথে সংযুক্ত। শীতকালে হালতি বিলের যে অংশে পানি থাকে, তা মৎস্য অভয়ারন্য হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। 

হালতি বিল দেখে আমরা চলে গেলাম চলনবিল দেখতে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলা জুড়ে এর বিস্তৃতি। শুষ্ক মৌসুমে এসব বিলে পানি থাকে না। তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিতে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। চলনবিলে বেড়ানোর জন্য নৌকা পাওয়া যায় ভাড়ায়। আমরা যদিও শুকনো মৌসুমে গিয়েছিলাম, পানিতে টইটুম্বুর ছিল না, কিন্তু তাতে বিলগুলোর সৌন্দর্য একটুও ম্লান হয়নি। প্রকৃতির ব্যাপারটাই এরকম। একেক মৌসুমের রূপ একেকরকম। তবে বর্ষায় একবার যেতেই হবে, ভেতর থেকে কেউ যেন বলছিল!

রাতে আবার পচুর হোটেলে খেয়ে আমরা চমৎকার একটা ঘুম দিয়ে সকালে উঠে চলে গেলাম দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবনে। সাড়ে ৪১ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রাসাদটি পরিখা ও উঁচু প্রাচীরঘেরা। উত্তরা গণভবনের প্রবেশ পথের বিশাল ফটকটি আসলে একটি বিরাটাকৃতির পাথরের ঘড়ি। ঘড়িটি রাজা দয়ারাম সেই সময় ইংল্যান্ড থেকে আনিয়েছিলেন। ঘড়িটির পাশে রয়েছে একটি বড় ঘণ্টা। এক সময় এই ঘণ্টাধ্বনি বহুদূর থেকে শোনা যেত। উত্তরা গণভবনের রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম।

উত্তরা গণভবন দেখে আমরা চলে যাই নাটোর রাজবাড়ি, যা রাণী ভবাণীর বাড়ি হিসেবেও পরিচিত। রাণী ভবাণী ইংরেজ শাসনামলে নাটোরের একজন জমিদার ছিলেন। 

রাণী ভবাণীর নাটোর রাজবাড়ি বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান। এতো বড় এলাকা নিয়ে করা রাজবাড়ি এখন পর্যন্ত কোথাও চোখে পড়ে নাই। গেইট দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে বিশাল একটা ঘাট বাঁধানো পুকুর চোখে পড়ে, নাম জলটুংগি পুকুর। মন্দির, রাজবাড়ি, বাড়ির সামনের বিশাল মাঠ, সব মিলিয়ে খুবই সুন্দর জায়গা। অনেক ভালো লেগেছে। নাটোরে আছি আর কাঁচাগোল্লা খাবো না, তাই কি হয়? কাঁচাগোল্লা খেতে আমরা চলে গেলাম লালবাজারের জয় কালীবাড়ি সংলগ্ন মিষ্টির দোকানে। 

কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির রয়েছে চমৎকার কাহিনী। জনশ্রুতি আছে, নিতান্তই বিপদে পড়েই নাকি তৈরী হয়েছিল এই মিষ্টি। নাটোর শহরের লালবাজারের মধুসূদন পালের দোকান ছিল নাটোরের প্রসিদ্ধ মিষ্টির দোকান। দোকানে বেশ কয়েকটি বড় বড় চুলা ছিল। মধুসূদন এসব চুলায় টাটকা বানানো প্রায় দুই মণ ছানা দিয়ে রসগোল্লা, পানতোয়া, চমচম, কালো জাম প্রভৃতি মিষ্টি তৈরি করতেন। দোকানে কাজ করতেন দশ পনের জন কর্মচারী। হঠাৎ একদিন মিষ্টির দোকানের কারিগর আসেনি। মধুসূদনের তো মাথায় হাত! এত ছানা এখন কী হবে? এই চিন্তায় তিনি অস্থির। নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে ছানাতে তিনি চিনির রস ঢেলে জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখতে বলেন। এরপর মুখে দিয়ে দেখা যায় ওই চিনিমেশানো ছানার দারুণ স্বাদ হয়েছে। নতুন মিষ্টির নাম কী রাখা হবে এই নিয়ে শুরু হয় চিন্তা ভাবনা। যেহেতু চিনির রসে ডোবানোর পূর্বে ছানাকে কিছুই করতে হয়নি অর্থাৎ কাঁচা ছানাই চিনির রসে ঢালা হয়েছে, তাই এর নাম দেয়া হলো ‘কাঁচাগোল্লা’। জয়কালিবাড়ির দোকানই হচ্ছে কাঁচাগোল্লার আদি দোকান। 

কাঁচাগোল্লা দেখে তো আমরা অবাক! আরে! কাঁচাগোল্লা না গোল, গোল হয়? মালিক হেসে বললেন, জ্বী না, কাঁচাগোল্লা হচ্ছে কাঁচা ছানা।” রিকশাওয়ালা ভাই বললেন, “আগেকার কাঁচাগোল্লা একবার খেলে তার স্বাদ আজীবন মনে থাকতো!” আগে হয়তো এতোটাই সুস্বাদু ছিল!

জীবনানন্দের বনলতা সেন দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। এখানে বলে রাখা ভালো, বনলতা সেনের রহস্য কিš‘ এখনো অমীমাংসিত!

Related Post
রেমা-কালেঙ্গা

রেমা-কালেঙ্গা

মাঝরাতে বৃষ্টির টিপটিপ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। সকালের বাসে হবিগঞ্জ যাওয়ার কথা। বৃষ্টি হলে...

সুসং দূর্গাপুর

সুসং দূর্গাপুর

আমাদের ময়মনসিংহ ট্যুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল সুসং দূর্গাপুর ভ্রমণ। এটি একটি...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!