বাংলাদেশের ডাইনো পার্ক

by | জানু. 4, 2023 | Insight, Travelling

Traditional Khichuri hobe

The First Dino Park of Bangladesh is in Cumilla

স্কুলে যখন পড়ি, বইমেলা থেকে ডঃ জাফর ইকবালের একটা বই কিনেছিলাম। ডাইনোসর নিয়ে ছিল গল্পটা। গোগ্রাস গিলেছিলাম সেখানে টি-রেক্সের বর্ণনা। জুরাসিক পার্ক মুভিটা দেখার পর তো ডাইনোসরের রাজ্যেই চলে যেতে ইচ্ছা হয়েছিল। এবারের কুমিল্লা সফরে সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। 

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে ১২ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে নতুন এই ডাইনোসর পার্ক। এটি ডাইনো পার্ক নামেই অধিক পরিচিত। কুমিল্লা ও আশপাশের জেলার মানুষকে নির্মল আনন্দ দিতে এই পার্কটি তৈরি করেছে মাশফিকা হোল্ডিংস লিমিটেড। ব্যক্তিগতভাবে চার ভাই ও বাবার উদ্যোগে এই পার্ক। চীনের ডাইনোসর পার্ক ঘুরে এসে তার আদলে তাঁরা এই পার্কটি তৈরি করেন। চীন থেকে আনা পাঁচটি ডাইনোসর ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে এখানে।

পার্কের প্রবেশমুখেই রয়েছে হেরিটেজের আদলে বানানো তিনতলা একটি ভবন। এখানে টিকিট কাউন্টার আছে। টিকিট কাটতে গিয়েই একটা গর্জন শুনতে পেলাম। ভেতরে ঢুকতে একটা দেয়াল। এর অপর পাশে মঞ্চের মতো, তার সামনে একটি গোল কাঠের বেঞ্চ রয়েছে। সেই বেঞ্চে বসে সামনের দিকে তাকাতেই বাগানের ঠিক মাঝখানে ভয়ঙ্কর টাইরানোসরাস রেক্স দেখতে পাবেন। সে রক্তচক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে। এর পেছনে আছে একটি সুন্দর কৃত্রিম ঝর্ণা।

মঞ্চের দুই পাশে দুটি উঁচু পথ। ডান দিকে গেলে মাথায় একরকম টুপির মতো একটি প্যারাসাউরোলোফাস এবং নাকে দুটি শিং সহ ট্রাইসেরাটপস আপনাকে অভ্যর্থনা জানাবে। আর বাম পাশে সুন্দর রংধনু সিঁড়ি। সেই সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল ব্র্যাকিওসরাস, অনেকটা লম্বা ঘাড়ওয়ালা জিরাফের মতো। সিঁড়ি বেয়ে রাস্তার পাশে নেমে আসলে দেখা মিলবে স্পাইনোসরাসের। প্রতিটি ডাইনোসরের নিচে এদের ইতিহাস লেখা আছে।

দশ মিনিট পর পর তাদের গর্জন শোনা যায়।  সবচেয়ে বড় আশ্চর্য, তারা শুধু গর্জন করেই থেমে থাকে না। তাদের চোখের পলক ফেলতে পারে, মাথা নাড়াতে পারে এবং এমনকি খুব ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তাদের পেট শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ওঠানামা করে। একদম সত্যিকারের প্রাণীর মতো।

লালমাই পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে রংধনু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হবে যেখানে আছে সুন্দর সব রাইডগুলো। শুধুমাত্র বড়দের জন্য নয়, শিশুদের জন্যও সুন্দর খেলনা রাইড রয়েছে। আছে ড্রাগন কোস্টার, রোলার কোস্টার, অক্টোপাস, মেরি-গো-রাউন্ড এবং আরও অনেক কিছু।

এ ছাড়া যেকোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে এখানে পিকনিক বা কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। এই পার্কের উচ্চতা মাটির স্তর থেকে ৪৫ ফুট। এর উপরে আছে প্যারিস হুইল, যা ‘লালমাইয়ের চোখ’ নামেও পরিচিত।

এখানে হিল ক্যাফে রেস্তোরাঁ আছে খাবারের জন্য।  বাঁশের মাচায় তৈরি এই হোটেলে খাওয়ার সময় প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। রেস্তোরার একপাশে ডেক সাইড। যেখানে একসঙ্গে অনেকে বসতে পারে, প্রায় ১৩৫ জন। খাবারের মানও বেশ ভালো।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, গোছানো ব্যবস্থাপনা এবং নতুনত্ব, সব মিলিয়ে ডাইনো পার্ক হতে পারে সুন্দর একটি ভ্রমণ গন্তব্য। এছাড়াও সেখানে গেলে কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাইয়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।  আসল মাতৃভান্ডারের দোকান হচ্ছে মনোহরপুরে। রসগোল্লা ও মালাইয়ের মিশ্রণ ঘটিয়ে রসমালাই পরিপূর্ণতা পায়। দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। প্রতি মণ দুধ জ্বাল দিয়ে ১০-১২ কেজি মালাই তৈরি করা হয়। এর ঘনত্বের ওপরই রসমালাইয়ের স্বাদ নির্ভর করে। ঘন মালাইয়ের স্বাদে ভরা ছোট ছোট এই রসগোল্লাগুলো আপনার মন কেড়ে নিতে যথেষ্ট!

Related Post
রেমা-কালেঙ্গা

রেমা-কালেঙ্গা

মাঝরাতে বৃষ্টির টিপটিপ শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল। সকালের বাসে হবিগঞ্জ যাওয়ার কথা। বৃষ্টি হলে...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!