পূর্ণিমায় সেন্টমার্টিনে ক্যাম্পিং করতে যাচ্ছি ‘ঘুরবো দেশ’ গ্রুপ থেকে আমরা ১৮ জন। আমাদের সাথে ছিলেন মুশতাকের কলিগ আনোয়ার ভাই-পিঙ্কী ভাবী। এর আগেও আমরা একসাথে সিলেট, সাজেক ঘুরে আসছি। কাজেই একটা জমজমাট ট্যুরের আশায় আমরা সন্ধ্যা নাগাদ শ্যামলীর কাউন্টারে হাজির।
গল্প করতে করতে, একটু ঘুমাতে ঘুমাতে, এবং প্রায় ফাঁকা রাস্তা পেয়ে অবাক হতে হতে সময়মতোই টেকনাফ পৌঁছে গেলাম। টেকনাফে ফ্রেশ হয়ে, নাস্তা করে আমরা উঠে বসলাম শীপে। সেন্টমার্টিনে শীপের একটা ভালো দিক হচ্ছে, পাখি দেখা। অনেকে চিপস ছুঁড়ে দেন পাখিদের। এভাবে ওদের খাবার দেয়া ঠিক না। ওদের স্বভাবগত পরিবর্তন হয়ে যায়। বেলা প্রায় একটা বাজে, আমরা পা ফেললাম দারুচিনি দ্বীপে। পশ্চিম বিচের পাশেই সিটিবি রিসোর্টে পৌঁছে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে প্রথমে খাবার পালা। যেহেতু সমুদ্রে গিয়েছি, সামুদ্রিক মাছ অপরিহার্য। সবার পছন্দ কোরাল।
সজল ভাইয়া বললেন, ‘একটা মাছ আছে, নাম সুন্দরী। খেতে ভালো, চেখে দেখতে পারেন।’ সেটাও অর্ডার করা হলো। কড়কড়ে মাছ ভাজা, দুই রকম সবজি, ডাল, ভাত। ভরপেট খেয়েদেয়ে উঠে সবাই হাঁটা দিলাম, সাগরে ঝাঁপাঝাঁপি করবো। পানিতে যখন নামি, তখন ভাটা। আস্তে আস্তে পানি বাড়ছিল, সাথে ঠান্ডা বাতাস। চুপ করে হাত-পা এলিয়ে পানিতে গা ছেড়ে দিয়ে বসে ছিলাম। সমুদ্রের আকর্ষণ খুবই দুর্নিবার….
বিকালে হাঁটতে বের হলাম। ওখানের ছোট ছোট দোকানগুলোতে কতো কিছুর পসরা! আমরা ঝালমুড়ি খেলাম। তারপর এক জায়গায় বসে তরমুজ খেলাম। তারপর খেলাম মাছ ভাজা। তাজা মাছ পছন্দ করো, অর্ডার দাও আর খাও। রূপচাঁদা, টুনা, সুন্দরী, কোরালসহ আরো অনেক মাছ। অক্টোপাস, কাঁকড়া এবং স্কুইডও আছে। তারপর আরেকটু হেঁটে সামনে যেয়ে ডাবের পানি খেলাম। তুলনামূলক মনে হলো ডাবের দাম ওখানে বেশীই। আমরা হাঁটছিলাম… আকাশে গোলগাল ভরাট চাঁদ, সমুদ্রে তার রূপালী ছায়া, চিকচিকে বালি, ঠান্ডা বাতাস… একটা ঘোরের ভেতর চলছিলাম। দ্বীপে যে এতো ঠান্ডা লাগতে পারে ধারণা ছিল না। হাড়কাঁপানো বাতাস ছিল, আমাদের সাথে গরম কাপড় ছিল না। ফিরে গেলাম রিসোর্টের সামনে যেখানে আমাদের তাঁবু টাঙানো হয়েছে। রাতে আমাদের জন্যে বারবিকিউ এর আয়োজন ছিল। মাছ, মুরগী এবং পরোটা। সেন্টমার্টিনের রিসোর্টগুলোতে বারবিকিউটা বেশ ভালো হয়। খাওয়া শেষ করে সোজা তাঁবুর ভেতর ঢুকে ঘুম দিলাম।
ঘুম ভাঙলো খুব সকালেই। চোখে নীল আকাশ, কানে সাগরের গর্জন। নাস্তার টেবিলে যেয়ে বসলাম। সকালের নাস্তায় আমাদের জন্যে ছিল খিচুড়ি, ডিম ভাজা ও সবজি। খিচুড়ির কথা বিশেষভাবে না বললেই নয়। এই খিচুড়িতে খুব সামান্য পানি ব্যবহার করা হয়। নেড়ে নেড়ে খিচুড়িটা ভেজে ফেলা হয়। রান্নার প্রণালীটা অদ্ভুত হলেও স্বাদে খারাপ না।
আমরা ট্রলার থেকে নেমে হাঁটতে লাগলাম। পাশাপাশি হেঁটে গেলে প্রবাল দ্বীপ আর ছেঁড়া দ্বীপ সুন্দর দেখা যায়। পানি এতো স্বচ্ছ, নীচের প্রবাল দেখা যায় পরিষ্কার। দারুচিনি দ্বীপের চেয়ে আমার ছেঁড়া দ্বীপেই বেশী ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা, নিরিবিলি, মানুষ কম ছিল। ওখানে রঙে ডোবানো গোলা আইসক্রিমও খাওয়া হলো।
ফেরার সময় হয়ে গেল। শীপ ধরতে হবে। সমুদ্রের ডাক উপেক্ষা করে চলে আসা ভীষণ কঠিন হয়ে যায়। মন পড়ে থাকে সাগরের ঢেউয়ে… সৈকতের বালুচরে… শুধু শরীর বয়ে আনা কষ্টকর হয়ে যায়!