যে খাবারগুলো সময়ের গন্ডি পার করে যুগের পর যুগ নানা প্রজন্মের মন আন্দোলিত করে যায় তাদেরকে বলা হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার। নিহারি হলো তেমনই একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার।
নিহারি হলো স্টু জাতীয় একটি খাবার। এই খাবারটি তৈরি হয় অস্থিমজ্জা সমেত মাংসকে দীর্ঘক্ষণ ধরে রান্না করে। নিহারি তৈরিতে মুরগি, খাসি, গরু ইত্যাদি সব ধরণের মাংসের ব্যবহারই হয়ে থাকে। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য মাংসের সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে গরম মশলা, লম্বা গোল মরিচ, লবঙ্গ, এলাচসহ নানা ধরণের উপকরণ।
নিহারি সাধারণত রান্না হয়ে থাকে বড় পাতিলে, অনেক সময় নিয়ে। ছয় থেকে আট ঘণ্টা রান্নার পর তৈরি হয়ে থাকে এই নিহারি। মাঝেমধ্যে গোটা রাতজুড়ে রান্না করা হয়ে থাকে যাতে করে মাংস সম্পূর্ণরূপে গলে গিয়ে মাখনের মতো স্টু এর সাথে ভিন্ন একটি স্বাদ যোগ করে। নিহারিকে আরও সুস্বাদু করে তোলার জন্য রান্না শেষে এর মধ্যে দেয়া হয় ঘি, কাঁচা মরিচ এবং ধনেপাতা। সাধারণত নানা ধরণের রুটি দিয়েই নিহারি উপভোগ করা হয়।
ভারতবর্ষে নিহারির প্রচলন শুরু হয় সতেরো-আঠারো শতকের দিকে। যদিও এর প্রচলন নিয়ে কিছু মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায়। কিছু ঐতিহাসিক এর মতে এত উৎপত্তি হচ্ছে দিল্লিতে। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন পুরাতন দিল্লিতে এটি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও এর উৎপত্তি হয়েছে আওয়াদহি রন্ধনপ্রণালীতে।
ভারতবর্ষের মুসলমানদের কাছে নিহারি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের ফলে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পরে পাকিস্তানে। সময়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মানুষের মনেও জায়গা করে নেয় এই খাবার। বর্তমানে নিহারি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলার মধ্যে অন্যতম একটি খাবার। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক স্থানে এর ব্যাপক চাহিদা লক্ষ্য করা যায়।
বড় রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের ভাসমান ফুডকার্টে ও নিহারি বিক্রি হয়ে থাকে। অনেক ধরণের নিহারির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো গরুর নলার নিহারি। নিহারির জন্য জনপ্রিয় দোকানগুলোতে ভোরবেলায় লক্ষ্য করা যায় ভোজনরসিকদের লম্বা সারি। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে এই সারি অধিকতর লম্বা হয়ে থাকে। সকলেই চায় ছুটির দিনের সকালটা নিহারির দুর্দান্ত স্বাদ দিয়ে শুরু করতে। একজন ভোজনরসিক হিসেবে আমি অন্তত তা চাই। আপনি চান তো?