বলা হয়ে থাকে মাছে-ভাতে বাঙালি। আর মাছ যদি হয় ইলিশ, তাহলে তো আর কথাই নেই। একদম সোনায় সোহাগা! বাঙালির ইলিশ উন্মত্ততার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় বাংলা নববর্ষের সময় – পান্তা ইলিশের মাধ্যমে। কেনই বা উন্মাদ হবে না বাঙালি? হাজার হলেও আমাদের জাতীয় মাছ এটি। স্বভাবতই, ইলিশ ব্যাপক জনপ্রিয় এবং এর চাহিদা সর্বদা উর্ধ্বমুখী। পান্তা ইলিশ হল ইলিশের অনেকগুলো সুস্বাদু রেসিপির একটি। এর প্রতিটি পদই সমানভাবে ভালো। এমনই একটি পদ হলো ইলিশ মাছের পাতুরি। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ তথা উভয় বঙ্গেই বেশ জনপ্রিয় একটি পদ। পাতায় মুড়ানো এই পদটি দেখতে যেমন ব্যতিক্রমি খেতেও তেমন অসাধারণ।
‘ইলিশ’ শব্দটিই যথেষ্ট আমাদের মুখে জিভে জল আনার জন্য। এর কথা শুনলেই আমাদের একটু চেখে দেখতে ইচ্ছে করে। ইলিশ বাঙালির কাছে অমূল্য। তাই তারা এর সর্বোচ্চটা উপভোগ করতে চায়। ইলিশের প্রায় সব রেসিপি মোটামুটি একই ধরনের মশলা দিয়ে রান্না করা হয়, মূলত রন্ধন পদ্ধতির কারণেই ইলিশের বিভিন্ন পদের স্বাদে পরিবর্তন আসে।
পাতু্রি হল এমন এক রন্ধন প্রক্রিয়া যেখানে মশলা মাখানো মাছকে পাতায় মুড়িয়ে সেঁকে/ভেজে নেওয়া হয়। ইলিশ মাছের পাতুরি রান্নার জন্য প্রথমেই ইলিশের টুকরাগুলোতে মশলা মাখানো হয়। আর আমরা জানি এই উপমহাদেশ মানেই মশলার ব্যবহার থাকবে। এই পদও তাই এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। ইলিশের টুকরাগুলো বিভিন্ন রকম মশলার পাশাপাশি সর্ষে বাঁটা, নারকেল, দই ইত্যাদি দিয়ে মাখানো হয়। এরপর মশলা মাখানো এসব টুকরাকে পাতায় মুড়ানো হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত কলা পাতা ব্যবহার করা হয়। এরপর এই কলা পাতাগুলো টুথপিক অথবা সুতা দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় যাতে ভাজার সময় মশলা বেরিয়ে না যায়। পরিশেষে পাতায় মুড়ানো মশলা মাখানো এসব ইলিশের টুকরাগুলো তেলে হাল্কা ভেজে নেওয়া হয়। ভাজা শেষে পরিবেশনের জন্য প্রস্তত হয়ে যায় ইলিশ মাছের পাতুরি।
ইলিশ মাছের পাতুরি সহজ কিন্তু সুস্বাদু একটি পদ। কলা পাতায় মুড়িয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশিত এই খাবারটি একটি পুরাদস্তুর বাঙালি খাবার। এর চেয়ে বেশি বাঙালি আবহ পাওয়ায় যায় না, তাই না?
অন্য মাছেরও পাতুরি বানানো সম্ভব কিন্তু তা কখনো ইলিশ মাছের পাতুরির মত মুখরোচক হবে না। হাজার হলেও, মাছের রাজা বলে কথা।