“পরীক্ষার খাতায় আবার রসগোল্লা আনিস না কিন্ত বলে দিলাম!”- এই ছিল আমার বাবা-মায়ের প্রথম কথা আমার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে। রসগোল্লাকে নিয়ে এই রুপক বাক্য আমার মনকে অনেক ব্যথিত করত, কেননা ছোট্টবেলা থেকেই রসগোল্লা আমার সবচাইতে প্রিয়। আমি বুঝতেই পারতাম না যে রসগোল্লার মত এত মজাদার খাবারকে পরীক্ষার ফলাফলের সাথে কেন তুলনা করতো। তবে হ্যা, রসগোল্লা পরীক্ষার খাতায় নম্বর হিসেবে না এসে ভালো ফলাফলের খুশিতে আসতো সব সময়। আর তখনই আমার মন ভালো হয়ে যেত।
মিষ্টির দুনিয়ায় রসগোল্লা এমন এক নাম যা শুনলেই আমাদের জিভে জল আসে। পৌরাণিক যুগ থেকে এখন পর্যন্ত রসগোল্লা বিশ্বব্যাপী সেরা। এটি দেখতে যেমন লোভনীয়, খেতেও তেমনি মজা। এমন অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে যারা রসগোল্লা ছাড়া অন্য কোন মিষ্টি খাবার পছন্দ করে না।
ধারণা করা হয়, রসগোল্লার প্রথম উৎপত্তি হয় পশ্চিম বাংলায় আর তা উদ্ভাবন করেন মিঠাইওয়ালা ‘নবীন চন্দ্র দাস’। এরপর থেকেই রসগোল্লা সর্বত্র সমাদৃত হয় খুব।
বিভিন্ন ধরনের রসগোল্লা পাওয়া যায় কিন্ত ‘ছানা আর সুজি’র সমন্বয়ে তৈরি রসগোল্লা সবচাইতে বেশি সুপরিচিত। ছানা আর সুজি একসাথে মিশিয়ে গোল মিষ্টি বানিয়ে এরপর সেগুলোকে চিনির শিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়। শৈশবকাল থেকেই আমি রসগোল্লা খুব পছন্দ করি। আমার বড় বোন আমার জন্য রসগোল্লা বানিয়ে রাখতেন, আর আমার যখনই রসগোল্লা খেতে ই”ছা করত আমি ওর কাছে বায়না ধরতাম। এর জন্য আমি প্রায়ই মিষ্টির দোকান গুলোতে ঢুঁ মেরে আসতাম। সেইখানে দেখতাম মিঠাইওয়ালারা বড় হাঁড়ি থেকে ফাঁপা গোল মিষ্টিগুলো বের করে চিনির শিরায় ডুবিয়ে রাখতেন। এরপর ফাঁপা মিষ্টিগুলোকে বের করে প্লাস্টিকের বাক্সে রেখে দিতেন বিক্রি করার জন্য। বাড়িতে এনে বাক্স গুলো খুললেই সেই দারুচিনির সুবাস সমগ্র বাড়িকে মুখরিত করে তুলতো।
বাঙালীরা রসগোল্লার সাথে বহু শতাব্দী আগে থেকেই পরিচিত। কারো সামনে যদি বার্গার কিংবা পিজ্জা থাকে তারপরেও কেউ রসগোল্লাকে না বলতে পারবে না। বিভিন্ন দেশে মানুষের পছন্দ যেমন ভিন্ন, তেমনিই তারা রসগোল্লাও বিভিন্ন ভাবে খেতে পছন্দ করে। কেউ পছন্দ করে রসে ডুবিয়ে খেতে, কেউবা গরম গরম খেতে। কেউ দুধের স্বরে ডুবিয়ে খেতে কিংবা ঠান্ডা মাটির হাঁড়িতে রেখে খেতে। এই কথাটি মোটেও ভুল নয় যে, ‘রসগোল্লা তো রসগোল্লাই, যার কোন তুলনা নেই।’
যেহেতু রসগোল্লা ছানা ও সুজির সমন্বয়ে তৈরি, তাই তার পুষ্টিগুণও রয়েছে। ১০০ গ্রাম রসগোল্লায় আছে ১৮৬ ক্যালরি। এতে আরও রয়েছে ৪ গ্রাম প্রোটিন আর ১.৮০ গ্রাম চর্বি। একটি সুস্বাদু মিষ্টান্ন হিসেবে এটির ব্যাপক পুষ্টিগুণও রয়েছে।
নানা রকমের মিষ্টির উদ্ভাবন ঘটার পরেও রসগোল্লার পরিচিতি এখনও একই আছে। আমরা এখনও মিষ্টিমুখ করতে রসগোল্লাকেই বেছে নেই। কারও বাড়িতে বেড়াতে কিংবা, কোন বিয়েতে, যেকোনো উৎসবে রসগোল্লাই প্রধান পছন্দ। ছোট-বড় সকলেরই প্রিয় এই জনপ্রিয় রসগোল্লা। যত দিন যাচ্ছে এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েই চলছে। সাদা ধবধবে এই মিষ্টির গুণাগুণ বর্ণনা করে তাই শেষ করা সহজ নয় মিষ্টান্নপ্রেমীদের জন্য। তাই চলুন একপিস রসগোল্লা খেয়েই রসগোল্লার এই জনপ্রিয়তার আনন্দ উদ্যাপন করা যাক!