ফুচকার উৎপত্তি 

by | জানু. 5, 2023 | Street Food

Traditional Khichuri hobe

Fuchka, a dish that everyone loves

ফুচকা অর্থাৎ – গরম মটর এবং আলু দিয়ে  বানানো ঘুর্নি একটা ফাঁপা ময়দার বানানো বলের ভিতরে দিয়ে, পেঁয়াজ, শসা, ধনেপাতা এবং সিদ্ধ ডিমের ঝুরঝুরি দিয়ে সজ্জিত করে টক মিষ্টি তেতুলের চাটনি দিয়ে পরিবেশন করা হয় যা ছোট বড় সবার কাছেই সমান ভাবে  সমাদৃত। 

অনেকের কাছেই ফুচকা একটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারন বলে মনে হতে পারে, তবে এই রন্ধনসম্পর্কীয় বিস্ময়টি নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ রন্ধনসম্পর্কীয় অর্জনগুলির মধ্যে একটি। ফুচকা সর্বজন স্বীকৃত এবং একটা সমৃদ্ধ জনপ্রিয় খাবার এ বিষয়ে দক্ষিণ এশীয়রা একমত হবেই। ফুচকা ছাড়াও, সর্বাধিক ব্যাবহৃত অন্য দুটি নাম হল পানিপুরি এবং গোলগাপ্পা। ভারতের পশ্চিম ও দক্ষিণে এবং বিশ্বের বাকি অংশে পানিপুরি সবচেয়ে পরিচিত নাম। অঞ্চলভেদে অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে পানি পাতাশি, পানি কি বাতাশে, গুপ-চুপ, টিকিয়া, ফুলকি এবং পাকোদি।

A crispy snack with many names

গঠন এবং গন্ধের দিক থেকে, বাংলাদেশী ফুচকা, বা ফুসকা (সিলেট/চট্টগ্রাম) ভারতীয় পানিপুরি বা গোলগাপ্পা থেকে অনেকটাই আলাদা। আমাদের ফুচকার খোসাগুলো একটু বড় এবং গাঢ় রঙের। অন্যদের থেকে ভিন্ন, যেখানে ছোলা বা সাদা মটর থাকে এবং গরম সবুজ পুদিনা-ধনিয়ার জল বা হলুদ আমের জল থাকে, ফুচকায় অবশ্যই হলুদ মটর এবং একটি স্পেশাল মশলা তার টক লাল তেঁতুলের চাটনির জল থাকতেই হবে৷

ফুলকিস, ফুচকার অগ্রদূত, ভারতের ষোলটি মহাজনপদগুলির মধ্যে একটি (সংস্কৃতে মহান রাজ্য) মাগাধা রাজ্যে উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। গঙ্গার তীরে, বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বিহারে, মাগাধা সাম্রাজ্যের বিকাশ ঘটেছিল।

মাগাধা রাজ্য ছিল একটি প্রাচীন রন্ধনসম্পর্কীয় কেন্দ্র যা আজকের আধুনিক যুগের বিভিন্ন বিশেষত্বের জন্ম দিয়েছে। যদি কেউ  বাঙালী হয়ে থাকে, তাহলে তারা অবশ্যই চিড়া, তিলের নারু এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে পিঠা শব্দ এবং খাবারের সাথে পরিচিত।

ফুচকাকে ঘিরে আরেকটি ধর্মীয় ধারণা বেশ প্রচলিত। মহাভারতে, নববধূ ধ্রৌপদী তার শ্বশুর বাড়িতে আসার পর তার শাশুড়ি কুন্তী তাকে একটি ঘরের কাজ বা রান্না বান্নার একটি কাজে দিয়েছিল। তিনিও একজন সত্যিকারের রানী ছিলেন। ধ্রৌপদী,তিনিও একজন রাজকন্যা ছিলেন। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারী ব্যক্তিত্ব এবং পাঁচ পান্ডবের স্ত্রী। পাশার খেলায় রাজত্ব হারিয়ে যখন পান্ডব ভাই, ধ্রৌপদী এবং তাদের মা কুন্তী নির্বাসিত হয়েছিলেন তখন শাশুড়ি তার পুত্রবধূর একটা পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ধ্রৌপদীর শাশুরী তাকে কিছু অবশিষ্ট আলুর তরকারি এবং সামান্য গমের আটা দিয়ে বলেছিল তার পাঁচ পুত্রকে খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট খাবার প্রস্তুত করতে বলেছিলেন। কুন্তির এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল অজানা; কিছু মতবাদে দাবি করা হয়েছে যে ধ্রৌপদী একজন ভাল গৃহিণী হবেন কিনা যিনি অল্প উপকরণ দিয়ে ভাল ভাবে সংসার পরিচালনা করতে পারেন কিনা, তবে অন্য এক দল দাবি করেন যে ধ্রৌপদী পাঁচ ভাইয়ের চেয়ে যেকোন এক ভাইকে অনুগ্রহ করবেন কিনা তা দেখার জন্য ধ্রৌপদীর শাশুরী এই পরিক্ষাটি করেছিলেন। ধারণা করা হয় যে নববধূ তার শাশুড়ির অনুগ্রহ পেতে এবং তার মন জয় করতে ফুলকি বা ফুচকা তৈরি করে। পুত্রবধূর সৃজনশীলতায় মুগ্ধ হয়ে কুন্তী সেই খাবারটিকে অমর করেছিলেন।

যদিও এই মজাদার খাবারের সঠিক উৎস অজানা, তবে এই বিষয়টি  নিশ্চিত যে, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় শুরু হয় এবং সমগ্র উপমহাদেশ এর প্রেমে পড়ে যায়। ফুচকা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাস্তার খাবার এবং এই সত্য অস্বীকার করার মত কোন কারন দেখা যায় না। ফুচকা ‘উপযোগবাদী’ শব্দটিকে যথার্থ সমর্থন করে আর অর্থেরযোগান দেয়। অধরা আবেগের একটি বস্তুগত অভিব্যক্তি যা সহজ আনন্দ হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত এবং সমস্ত ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরে রাস্তার ধারের বিক্রেতারা বিক্রি করে চমৎকার মজাদার খাবারটি। ইতিহাস আবির্ভুত এই খাবারটিকে আমরা দক্ষিণ এশিয়রা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ি বিভিন্ন আমাদের খাবারের সাথে দীর্ঘদিন লালন করে আসছি। 

Related Post
তেলে ভাঁজা 

তেলে ভাঁজা 

ঢাকা একটি সমৃদ্ধশালী অর্থনীতির একটা শহর তেমনি ঢাকা একটি ব্যস্ত মহানগরও। এবং সুন্দর শহরের...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!