রসুন মূলত এলিয়াম পপরিবারের একটি প্রজাতি। রসুনের উৎপত্তিস্থল মূলত মধ্য-এশিয়াতে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, চায়নাতে এর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে যে মিশরীয়রা প্রায় ৫০০০ বছর আগে রসুনের প্রচলন করেছিল। এটি বিশ্বের প্রায় সর্বত্র জন্মে। বসন্তকাল রসুন উৎপাদনের উপযোগী সময়। রসুনের বৃদ্ধির জন্য ঠান্ডা তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। রসুন পেঁয়াজ এবং শ্যালটের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই মশলার প্রতিটি অংশকে বাংলায় কোয়া বলা হয়। রসুনের অনন্য স্বাদ এবং এরোমারা কারণে রান্নায় এর ব্যাপক ব্যাবহার রয়েছে।
রসুন সাধারণত রান্না করে খাওয়া হয় তবে কাঁচা খাওয়া যেতে পারে, যা আরও পুষ্টিকর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রসুন ব্যবহার করা হয় খাবারকে স্বাদযুক্ত করার জন্য। যেমন সালাদ, মেরিনেড, সস, স্যুপ, শাকসবজি এবং স্ট্যুসহ বিভিন্ন খাবার প্রস্তুতে রসুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। রসুন গার্লিক বাটার এবং গার্লিক টোস্টের জন্য ব্যবহৃত হয় যা তাদের সুস্বাদু স্বাদের জন্য বিখ্যাত। রসুনের সসও ইতিমধ্যেই সুস্বাদু স্বাদের জন্য যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে। কাবাব, পিৎজা, ফ্রাইস, পাস্তা, মাংসসহ যেকোনো খাবারের সাথেই রসুনের সসের সমন্বয় অতুলনীয়।
রসুন শুধু খাবারকেই সুস্বাদু করে না এর মধ্যে রয়েছে অনেক পুষ্টিকর উপাদান যা আমাদের সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রসুন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, ম্যাঙ্গানিজ এবং অ্যালিসিন সহ অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে পূর্ণ।
তাছাড়া, এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে কার্ডিওভাসকুলার রোগ কমাতে সাহায্য করে। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, রসুনের সাপ্লিমেন্টগুলো মানুষের ঠান্ডা এবং ফ্লুয়ের তীব্রতা কমাতে কাজ করে। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, রসুন মহিলাদের ইস্ট্রোজেন বাড়িয়ে হাড়ের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করতে পারে, যা মেয়েদেরত মেনোপজের পরে, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। রসুন আপনার ত্বকের জন্য একটি ওষুধ হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি স্পষ্ট যে, রসুন নিঃসন্দেহে আপনাকে স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে একটি উপযোগী উপাদান। তবে, কাঁচা রসুনে পাওয়া কিছু যৌগ পরিপাকতন্ত্রকে জ্বালাতন করতে পারে, যা বুকে বা পেটে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
বর্তমানে চীন এ রসুনের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে রসুনের উৎপাদনের হার খুবই কম। মূলত সঠিক সময়ে বীজের অনুপলব্ধতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব, পোকামাকড় ও রোগের উপদ্রব এবং কম বাজারমূল্যই হলো বাংলাদেশে রসুন চাষের প্রধান সমস্যা।
আমাদের দেশে রসুনের গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার মাত্র ৬.২৭%। এর থেকেই বোঝা যায় যে, অন্যান্য মসলার তুলনায় আমাদের দেশে রসুনের উৎপাদন হার অনেক বেশিই কম।
রসুন মূলত এর সুঘ্রাণ, স্বাদ এবং এর মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলোর কারণে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বিশ্বের প্রায় সবদেশেই তাদের খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে রসুনের গ্রহণযোগ্যতা অতুলনীয়।