ঝাল শব্দটি শোনার সাথে সাথেই কারো মুখে জল আসে আবার কারো চোখে জল আসে। আমারতো সাথে সাথে ঝাল কিছু খাইতে ইচ্ছে করে। আর আপনার?
আমরা সকলেই জানি যে ‘মরিচ’ এক ধরণের মশলা যা নির্দিষ্ট কিছু খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। অন্য কথায়, এটি এমন একটি উপাদান যা রন্ধনপ্রণালীতে একটি ঝাঁঝালো স্বাদ এনে দেয় যা শুকনো, কাঁচা বা পাউডার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
মরিচ গাছ প্রায় ৬০০০ বছর ধরে মানুষ চাষ করে আসছে। প্রাথমিকভাবে, অনুমান করা হয়েছিল মেক্সিকোতেই মরিচের উৎপত্তি । কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, তারাই মরিচের প্রতি বেশ আকৃষ্ট ছিল । তাহলে কিভাবে এবং কখন মরিচের উৎপত্তি হলো? আঠারো শতকের গোড়ার দিকে, একজন স্প্যানিশ রাজা ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ থেকে সান আন্তোনিও অ লে বসতি স্থাপনকারীদের একটি বৃহৎ গোষ্ঠীর স্থানান্তর বাধ্যতামূলক করেছিলেন যা এখন টেক্সাস নামে পরিচিত। এরাই মূলত মরিচের প্রচলন শুরু করেন। পরে, ১৮৮০-এর দশকে, সান আন্তোনিওর একটি বাজারে মরিচের স্ট্যান্ড স্থাপন করা শুরু করে যা মরিচ বা বাটি ও’রেড নামে পরিচিত এবং ‘চিলি কুইন’ নামক একদল মহিলা দ্বারা বিক্রি করা হয়। মরিচ দিয়ে তৈরি প্রাথমিক রেসিপিটিকে ‘চিলি কন কার্নে’ বলা হয় যা মরিচ, ভেনিসন, পেঁয়াজ এবং টমেটো দিয়ে তৈরি একটি আমেরিকান খাবার। ২০ শতকের মধ্যে, মরিচের বহুল ব্যবহার সর্বত্র পরিচিত হয়ে উঠেছিল, ধীরে ধীরে টেক্সাসে খুব কমই শহর ছিল যেখানে মরিচের দোকান ছিল না।
মরিচের বর্ণ, স্বাদ, আকার এবং পরিপক্কতা, তীক্ষ্ণতা ছাড়াও সারা বিশ্বে ৪০০০ টিরও বেশি ভিন্নধর্মী মরিচ বিদ্যমান। চলুন কিছু মরিচের স্বাদ নিয়ে আসা যাক।
বার্ডস আই চিলি
নামটার সাথে পাখির চোখের কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো এক ধরনের আফ্রিকান ছোট জাতের মরিচ। এই মরিচগুলো সারা বিশ্বে মসলা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, কাঁচা মরিচ প্রায়শই ভারত এবং এশিয়া জুড়ে রান্না এবং সালাদে ব্যবহৃত হয়।
বিশপ ক্রাউন চিলি
এই মরিচটি বেশ অদ্ভুত আকৃতির। এটা দেখতে একটি টুপি বা একটি ঘণ্টার মতো বলে নামটাও এমন। পাপরিকা স্বাদের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে এই জাতেরর মরিচের। এটি বিভিন্ন স্নাক্স ও খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
পেরি পেরি চিলি
এই মরিচের টাইপ সম্ভবত মোজাম্বিক থেকে পর্তুগালে এসেছে। এগুলির পাউডার সস, এবং আচার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই মরিচ শুঁটকি সহ মুরগির মেনুতে প্রায়শই খাবার হিসাবে পরিবেশন করা হয়।
টোবাস্কো চিলি:
মরিচ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত টোবাস্কো । এটি টোবাস্কো সসের জন্য সুপরিচিত, যা এর শুঁটি থেকে প্রস্তুত করা হয়।
ভুট জোলোকিয়া চিলি
গিনেস বুক রেকর্ডস অনুসারে, ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত, ভুট জোলোকিয়া, বিশ্বের সবচেয়ে ঝাঝালো মরিচ ছিল। একটা মরিচ এত ঝাল কিভাবে হতে পারে, যা একপ্রকার আশ্চর্যের বিষয় ছিল।
ডি কেয়েন মরিচের জাত
চিলি ডি কেয়েন একটি সুপরিচিত এবং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত মরিচ। এটি শুকনা মরিচের পাউডার বানানোর পর ব্যবহার করা হয় যা খাবারের স্বাদ একধাপ বাড়িয়ে দেয়।
ক্যারিবিয়ান রেড হাবার্ড
ক্যারিবিয়ান রেড হাবার্ড মরিচের রঙ টকটকে লাল। অতিরিক্ত ঝালযুক্ত এই মরিচটির নিজস্ব একটা স্মোকি ফ্লেভার আছে।
পেপারোনি লোম্বার্দো
লোম্বার্দো ঐতিহ্যগতভাব ইতালীয় পেপারণীর কাছাকাছি স্বাদ বহন করে । ভিনেগার বা তেলে সংরক্ষণ করা হলে এটি লম্বার্ডি নামেও পরিচিত। পেপেরনি হল একটি মশলা যা সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিৎজা টপিং হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
জালাপেনো মরিচের জাত
জালাপেনো মরিচের গাছগুলো চাষ করা সহজ। এই জাতের কাঁচা মরিচ ইতিমধ্যে সবুজ রঙেরগুলো বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো সবুজ বা লাল যে কোন অবস্থাতেই বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছুটা টক পেপারিকা স্বাদ যা সস, সালাদ এবং স্টাফড চিলি মরিচের পরিপূরক।
নাগা মরিচ চিলি
নাগা মরিচ, মরিচের একটি প্রজাতি, যা প্রচুর ঝালের কারণে সমধিক পরিচিত। বাংলাদেশের এই মরিচটি অনেক সময়ই, হয়তো ভুল করে, ভুট জলোকিয়া বা ভূত মরিচ বলা হয়ে থাকে এর প্রচন্ড ঝালের কারণে। তবে এটি কিছুটা ভিন্নধর্মী।
এছাড়াও, সর্বাধিক পরিচিত মরিচ হল- চিলি ব্ল্যাক পার্ল, রোকোটো প্ল্যান্টস, প্রেইরি ফায়ার অর্নামেন্টাল চিলি, হাবানেরো চিলি প্ল্যান্ট, চিলি ব্ল্যাক পার্ল, ৭ পট চিলি ভ্যারাইটিস, ক্যারোলিনা রিপার চিলি, আজি অ্যামারিলো চিলি ভ্যারাইটি ইত্যাদি।
ফসল কাটার পরে, মরিচ তাজা সংরক্ষণ করা হয় এবং বাজারজাত ও নিত্যব্যবহার শুরু করা হয়। শুকিয়ে গেলে এর স্বাদ আরও শক্তিশালী হয়। হিমায়িত হলে মরিচগুলো তাদের স্বাদ কিছুটা হারিয়ে ফেলে, তবে এর ভেতর ভিটামিন এবং খনিজ ভালভাবে বজায় থাকে। মজার বিষয় হচ্ছে, মরিচের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা হজমে সাহায্য করে।