প্রতি বছর বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপিত হয় ১৬ই অক্টোবর। এই দিনটি পালিত হবার অনেক কারণ আছে যেমন: ক্ষুধা এবং দারিদ্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টিকর খাদ্য বন্টন, প্রতিদিনের আহারে খাদ্য নিশ্চিত করা, জীবন থেকে ক্ষুধা নিশ্চিহ্ন করা ইত্যাদি।
১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’ ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির তৎকালীন খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রী এই দিনটি বিশ্বব্যাপি উদ্যাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়। এই দিনটি স্মরণীয় করার জন্য, এবং দরিদ্র ও ক্ষুধা নিবৃত্তির লক্ষ্যে বিশ্বের ১৫০ টিরও বেশি দেশ এই দিনটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে আসছে।
মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্য অন্যতম। কিš‘ আজও বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের রোষানলে পড়ে থাকে। তাই গত কয়েক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চাষযোগ্য জমি সংরক্ষণ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃত্রিম বনায়ন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি কর্মকা- এর মাধ্যমে পৃথিবীর সব উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ, বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যস্ত হয়ে আছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। পৃথিবী জুড়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরো কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিশচিতকরণ এখন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষের মধ্যে একটি।
২০২১ সালের খাদ্য দিবসের মূল বিষয়, “যদি নিরাপদ খাদ্য এখন, তবেই সুস্থ ও বিকশিত হবে আগামী”। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বিকশিত হোন, শরীরের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন। আমাদের কর্মই ভবিষ্যত। এ বছরের খাদ্য দিবসের মুখপাদ্য বিষয় এটাই বর্ণনা করে যে, নিরাপদ ও দূষণমুক্ত খাদ্য উৎপান ও গ্রহণ জনগণ, পৃথিবী এবং অর্থনীতির জন্য তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনে। এই দিনটি উদ্যাপনের উদ্দেশ্য হলো খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো। এর পাশাপাশি খাদ্য সংকটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে মানুষকে উৎসাহিত করা। কৃষি খাদ্য উৎপন্ন করতে উৎসাহিত করা। অর্থৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা করার মনোভাব জাগানো। গ্রামীণ মানুষের অবদান সম্পর্কে উৎসাহিত করা। বিশেষ করে নারী ও সমাজকে সব থেকে নীচু শ্রেণীর মানুষকে বিশেষ সুযোগ দেওয়া। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তর সম্পর্কে উৎসাহিত করা। ক্ষুধা অপুষ্টি ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পর্কে সমস্ত জাতিকে উৎসাহিত করা এবং জনসচেতনতা বাড়ানো। কৃষি সম্পর্কে নজর দেওয়া।
খাদ্যের সাথে কৃষির সম্পর্কটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যদি কৃষিকে বাদ দিয়ে আমরা খাদ্যের কথা বলি তবে বিষয়টি হবে অযৌত্তিক। প্রকৃতির সুরক্ষা, সবার জন্য খাদ্য বিষয়টি খুবই যথার্থ ও সময় উপযোগী। এমনকি এবারের প্রতিপাদ্য বর্তমান কৃষিবান্ধবই সরকারের “একটি বাড়ি একটি খামার”, কার্যক্রমের সংগতিপূর্ণ। বসতবাড়িগুলো শুধু আবাস¯’ল নয় বরং একেকটি কৃষি, মৎস, পশু, হস্ত, খামার ও চাষাবাদের কেন্দ্রবিন্দু।
বিশ্বের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতা দূর করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’ তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে এবং বিশ্ব খাদ্য দিবস উৎযাপন করছে। ক্রবর্ধমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ পৃথিবীর প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এখন প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যের অভাবে দারিদ্রের কষাঘাতে ধুঁকে মরছে। তাই বিশ্ব খাদ্য দিবসে জনসচেতনতা বাড়িয়ে দারিদ্র্যতা অর্ধেকে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সবাইকে বিশ্ব খাদ্য দিবসের শুভে”ছা! আসুন আমাদের অভ্যন্তরীণ খাদ্যপ্রেমীদের আলিঙ্গন করি। আমাদের খাবারকে অর্থবহ করে তুলি।