বাঁশ বা ব্যাম্বু শব্দটা আমাদের অতি পরিচিত। আর যাদের পরিচিত না তাদের জন্য ডিসকভারি চ্যানেলে প্রচারিত বেয়ার গ্রিলসের ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ এর উপমহাদেশীয় এপিসোডগুলো দেখার অনুরোধ রইলো। যাই হোক বাঁশ নিয়ে এত কথা বলার আসল কারণে আসি। ১৮ ই সেপ্টেম্বরকে বিশ্ব বাঁশ দিবস হিসেবে প্রথম ঘোষণা করা হয় ২০০৯ সালে। এরপর থেকে প্রতি বছর বাঁশ সংরক্ষণের জন্য মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী দিনটি পালন করা হয়।
বাঁশের জিনোম সিকোয়েন্স, বেড়ে ওঠা, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও নানাবিধ ব্যবহার নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
জিনোম সিকোয়েন্স, ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি ইত্যাদি শুনে মনে হচ্ছে- না বাবা, দরকার নেই আমার উদ্ভিদবিদ্যা। না, উদ্ভিদ-বিজ্ঞান শেখানোর কিছু নেই এখানে, শুধু সাধারণ কিছু জানাশোনা কথাগুলো নতুন করে ঝালাই করার প্রয়াস মাত্র। বাঁশ সাধারণত বিশ্বের সর্বত্র দেখা গেলেও দক্ষিণ এশীয় অ লসমূহে এর বিস্তার ব্যাপক। চলুন এবার সরাসরি চলে যাওয়া যাক এর নানাবিধ ব্যবহারে। বিভিন লোকশিল্পের কাজে এর ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রীর স্থায়িত্ব বেশি না হলেও পরিবেশবান্ধব হবার কারণে বর্তমান বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়া, দক্ষিণ এশীয় অ লের দিকে ঘর নির্মাণে বাঁশের ব্যবহার তো নিত্যদিনের ঘটনা।
বাঁশের ব্যবহার নিয়ে তো কত কথাই হল, এবার চলুন এর আর এক কাহিনীতে। প্রায়ই এলাকার মুরব্বিদের মুখে শোনা যায় “বড় হয়েছ কি ঘাস খেয়ে?” কিন্ত উনাদের বেশির ভাগই জানেন না যে মানুষ কিন্ত ঘাস ও খায়। কি বিশ্বাস হচ্ছে না?
তাহলে চলুন জেনে নেই ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, চীন, বাংলাদেশসহ ইন্ডিয়ার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে। কচি বাঁশ ও বাঁশের বিভিন্ন অংশ পুষ্টিকর ও মুখরোচক খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। আর বাঁশ কিš‘ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। সুতরাং, মানুষ যে ঘাস ও খায় ইহা প্রমাণিত। জী, বাঁশ খাদ্যদ্রব্য হিসেবেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহুল প্রচলিত। দেশ গুলোর নাম জানতে ইচ্ছা হচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই বাঁশকে লাঠির বদলে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা কিছ দেশের নাম। প্রথমেই বলে নিই বাংলাদেশের কথা। এদেশের সিলেটে “হাঁস-বাঁশ” নামে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার রয়েছে। যা মূলত হাঁস ও বাঁশের কোড়ল দিয়ে রান্না করা হয়। এর রেসিপিও বেশ সহজ। বাঁশের কোড়ল, হাঁসের মাংস, পেঁয়াজ-রসুন, আদা বাটা আর দই হলেই হয়ে যায়। তবে ভালো রান্নার জন্য রান্নার হাত ভালো হওয়াটাও আবশ্যক।
এবার ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। নাহলে দাদারা আবার বলতে পারেন বাঁশের বিস্কুট বানালাম আমরা আর আমাদের কথাই বলা হলো না। জী, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাঁশ সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষ্যে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বাঁশের কোড়ল ব্যবহার করে তৈরি বিস্কুটের সফল ভক্ষণ অভিযান পরিচালনা করেন, মানে খেয়ে দেখেন আর কি। বিস্কুট তৈরি করেছেন ত্রিপুরার সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাম্বু অ্যান্ড কেইন ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট’ (বি.সি.ডি.আই)। গবেষকদের দাবি এই খাদ্য ক্যান্সার ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। বলা হয়ে থাকে খাদ্য হিসেবে প্রথম বাঁশকে স্থান দেয় চীনারাই। চীনারা ব্যাম্বু রাইস, ব্যাম্বু শ্যূটস ইত্যাদি নানা নামে বাঁশের ব্যাবহারে তৈরি খাদ্য গ্রহণ করে। তারা কিন্ত ব্যাম্বু র্যাট নামে ব্যতিক্রমী একটি খাবারও খায় যা মূলত বাঁশ ও ইদুর দিয়ে রান্না করা হয়। বিশ্বে ব্যতীক্রমী খাবারের জন্য চীনারা বিখ্যাত তা তো সর্বজন বিদিত।
শুধু খাবার নয় প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, আপদকালীন সময়ে বিভিন্ন কাজে বাঁশের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। চলুন সবাই এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সচেতন হই। বাঁশকে গালাগালির পর্যায়ে নামিয়ে না এনে বরং বাঁশের সঠিক ব্যাবহারই হোক এই ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাম্বু ডে’ এর মূল প্রেরণা।