সঞ্জিব কাপুর এমন একজন ভারতীয় অগ্রণী রন্ধনশিল্পীর নাম যিনি কিনা তার চমৎকার ব্যক্তিত্ব এবং অতুলনীয় রান্নার দক্ষতা দিয়ে পুরো বিশ্বে ঝড় তুলেছেন। এই বহু গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিটি তার খাবারের স্বাদের জাদু শুধুমাত্র ঘরের ছোট্ট রান্নাঘরেই সীমাবদ্ধ রাখেননি বরং ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বের দরবারে এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন তার স্বপ্নের রেস্তোরাঁ ‘দ্যা ইয়েলো চিলি’। সঞ্জিব কাপুর টিভির পর্দায় সর্বপ্রথম হাজির হন ১৯৯৩ সালে ‘খানা খাজানা’ নামক রান্নার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যা তার পরিচিতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়। এই থেকে শুরু হয় তার জনপ্রিয়তার জগতে অবিরাম পথচলা এবং এরপর তাকে আর কখন পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। বিগত বহু বছর ধরে তিনি তার নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে নিজের রন্ধনশিল্পের যেই সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন তা বিশ্বের বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং রান্নার জগতে নবাগত শেফদের সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে ।
সঞ্জিব কাপুর তার এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে তিনি নিজেকে পারফেকশনিস্ট মনে করেন এবং তার সফলতার পেছনে তার এই গুণকে তিনি যথেষ্ট পরিমানে কৃতজ্ঞতা দেন।
জগতবিখ্যাত এই ভারতীয় শেফের জন্ম হয় ১০ই এপ্রিল, ১৯৬৪ সালে হারিয়ানা আম্বালা শহরে। তার বাবা একজন ব্যাংকার হওয়ার সুবাদে তিনি ও তার পরিবার ভারতের বিভিন্ন শহরে থাকা ও পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছেন। এই সুখ্যাত শেফ, ব্যবসায়ী ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব তার এক ইন্টারভিউতে বলেন শেফ হওয়ার ইচ্ছা তার কখনই ছিল না। তিনি হতে চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা ছিল তার বিপরীত। ভাগ্য পরিক্রমায় তিনি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। তিনি ১৯৯২ সালে ভারতের মুম্বাই-এর সেন্টার হোটেলের সর্বকনিষ্ঠ শেফ হিসেবে নির্বাচিত হন।
তার এই সফল ক্যারিয়ার জীবনে তিনি বহু রান্নার বই প্রকাশ করে খ্যাতি অর্জন করেছেন, নিজের খাবার ভিত্তিক টিভি চ্যানেল চালু করেছেন, নিজের ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসাও রয়েছে তার যার সবই খাবার ও রান্নাকে ঘিরে গড়ে তুলেছেন তিনি। সঞ্জিব কাপুর প্রমান করেছেন কিভাবে নিজের প্যাশনকে অনুসরণ করে সফল ক্যারিয়ার এবং ব্যবসার সম্রাজ্য গড়ে তোলা যায়। উদ্যোক্তা এবং শেফ হিসেবে তার সফলতার জন্য ২০১৬ সালের ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের ‘ফোর্বস ইন্ডিয়া সেলিব্রেটি ১০০’ তালিকাতে তার নাম প্রকাশ পায়। তিনি ইন্ডিয়াতে টিভি চ্যানেল চালু করেন যার নাম ‘ফুডফুড’ যেখানে সার্বক্ষণিক রান্না এবং খাবার সম্পর্কিত অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই অভিজ্ঞ শেফ রান্না ও রান্নার প্রণালি নিয়ে প্রায় শ’খানেকের উপরে বই প্রকাশ করেছেন যা হিন্দিসহ আরও কয়েকটি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, এবং সমাদৃত হয়েছে সকলের মাঝে।
সঞ্জিব কাপুর তার রাজকীয় ক্যারিয়ারে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন ভারতীয় খাবারকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০১৭ সালে পাওয়া ‘পাদ্মাশ্রী এ্যাওয়ার্ড’ যা যেকোনো ভারতীয়র জন্য অতি গৌরব ও সম্মানের। তার রেস্তোরাঁ ‘খানা খাজানা’ শুধু ভারতেই না বাংলাদেশের রাজধানী শহরে প্রতি নিয়ত ভোজনরসিকদের আশ মেটাচ্ছে। নারীদেরকে রন্ধনশিল্পে দক্ষ করে তোলার পেছনে সঞ্জিব কাপুরের অনুপ্রেরণা ছিল অনেক। এক ইন্টারভিউতে তিনি বলেন ‘শেফদের জগতে খুব কম নারীই পদার্পণ করেছেন কিন্তু দীর্ঘদিন স্থায়ী হননি’। তিনি ভারতের বহু গৃহিণীদের নিজেদের গন্ডি থেকে বেরিয়ে রান্নার জগতে ক্যারিয়ার গড়ার পথ সুগম করে দিয়েছেন।
বিশ্ববিখ্যাত রন্ধনশিল্পি ও ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও সঞ্জিব কাপুর সর্বদা অমায়িক থাকতে চেষ্টা করেছেন। তিনি তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। তার সহধর্মিণী এবং বিজনেস পার্টনার আলইয়না কাপুর তার ক্যারিয়ার জীবনে সব সময়ই পাশে ছিলেন প্রেরণা হয়ে। একজন মাস্টারশেফ, দূরদর্শী এবং সংসারী ব্যক্তি সঞ্জিব কাপুর সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তার রন্ধনশিল্পের গুণে। বিশ্বের শতশত পরিবার তার রান্নার আদলে এক অদ্ভুত বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। তাই বলা যেতে পারে, রন্ধনশিল্পে সঞ্জিব কাপুর নিঃসন্দেহে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।