সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের সকল অঙ্গনে আসছে পরিবর্তন। রান্নাঘর সেই তালে পিছিয়ে নেই কোন অংশে। ঘরের ভেতরই বলি আর বাইরে, রান্নাঘরে অবদান রাখা মানুষটা আমাদেরকে প্রতিনিয়ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। রান্না করতে জানা আর সঠিক নিয়ম নীতি অনুসরণ করে রান্না করার ভেতর একটা পার্থক্য আছে। পরিচ্ছন্নতা ও স্বাদ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশনের যে গুরুভার একজন শেফের ওপর থাকে তা কিন্তু অনস্বীকার্য।
‘দ্য ডাইনিভার্স’ তুলে ধরার চেষ্টা করে এমনই অবদানকারীর অনুভূতিকে। আমাদের এবারের ‘ব্যক্তিত্ব’ পর্বের সাক্ষাৎকারে আছেন শেফ ‘রাজ আহমেদ’ যিনি জাপান এম্বাসির চাকরি ছেড়ে ২০১২ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুদুর দুবাই শেফ হবার স্বপ্ন নিয়ে। দুবাইয়ের ‘সানা নোরা কিচেন’-এ শিক্ষানবীশ শেফ হিসেবে যাত্রা শুরু করেন তিনি। পারদর্শীতার চমক দেখিয়ে মন জয় করেন সকলের এবং সেই বছরেই তিনি কাতার চলে যান একজন রোমানিয়া শেফের নির্দেশনা মোতাবেক। কাতারের ‘দ্য অ্যাটেলিয়ার আর্ট ক্যাফে’ তে ২০১৩ সাল থেকে কমিস-১ হিসেবে তিনি কাজ করেন দীর্ঘ ৪ বছরের বেশি সময়। সেখান থেকে তিনি হেড শেফ হিসেবে যোগদান করেন ‘দ্য বক্স কফি শপ’-এ। নানা রকম আরবীয় রন্ধনশীল্পের খুঁটিনাটি জানার নেশায় তিনি কাজ শুরু করেন ‘নুরা কিচেন’ নামক একটি ক্যাটারিং হাউজে। করোনা পরিস্থিতির নানা রকম চরাই উৎরাই শেষে ২০২০ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি।
’দ্য ডাইনিভার্স’ এর সাথে কথোপকথোনে তিনি শেয়ার করেন এ ধরনের আরও অনেক গল্প। আসুন পড়ে নেওয়া যাক সাক্ষাৎকারটি।
১. বাংলাদেশে ‘ডাইনবিডি’ প্রতিষ্ঠানের পদক্ষেপগুলোকে আপনি কি চোখে দেখছেন?
সত্যি কথা বলতে আমি বেশ অবাক হয়েছি এমন একটি পদক্ষেপের কথা শুনে। সেই সাথে ভীষন খুশিও, কারণ বিদেশে থাকাকালীন আমার প্রায় ক্ষেত্রেই মনে হত বাংলাদেশে এমন কিছু একটার সূচনা রেস্তোরাঁ ব্যবসা এবং খাবারের সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনতে পারবে। জনগণ সঠিক দিক নির্দেশনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে পারবে।
২. খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার আঙ্গিকে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বের তুলনামূলক অবস্থান আপনি কিভাবে নিরূপন করছেন?
যেহেতু খাবার জগতে শেফ হিসেবে হাতেখড়ি আমার দেশের বাইরে, সেক্ষেত্রে আমি এতটুকু জানি যে পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে বিদেশি রেস্তোরাঁগুলো কতটা সচেতন। বাংলাদেশে রেস্তোরাঁয় আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তন ইদানিং দেখা দিলেও আমার মনে হয় সেগুলো হাতে গোনা কয়েকটা। ‘ডাইনবিডি’র খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শুরু হতে যাওয়া ব্যবস্থাকে তাই আমি অনেক সাধুবাদ জানাই।
৩. আপনার আয়ত্ব করা কুইজিনগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করবেন।
ইতালিয়ান, ফরাসী, থাই, চাইনিজ ও আরবীয় অনেক কুইজিন নিয়ে কাজ করা হয়েছে আমার। ৫৩ রকম খাবার মেনুর ওপর আয়ত্ব করার সুযোগ এখন পর্যন্ত আমি পেয়েছি। ইংল্যান্ডের মাস্টার শেফ গর্ডন রামসে’র বেশ বড় ভক্ত হওয়ায় ভবিষ্যতে আমার অনেক কুইজিনের ওপর দক্ষতা অর্জনের ইচ্ছা আছে।
৪. বিশেষ কোন কুইজিনে আপনার পারদর্শিতা সম্পর্কে বলবেন।
আল্লাহর রহমতে আমি এখন পর্যন্ত যেখানেই কাজ করেছি সেখানেই সব ধরনের কাজে আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাই বিশেষ একটা কুইজিন বলতে আমি বলবো ইটালিয়ান কুইজিনের কথা। এটা আমার পছন্দের একটি ধরন আর আরবীয় খাবারের প্রতিও আমার একটা দূর্বলতা কাজ করে।
৫. বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি নিয়ে আপনার কি মতামত?
রেস্তোরাঁ ব্যবসা এতটা সহজ কিছু নয় যেমনটা অনেক মানুষ মনে করেন। আমার দেখা অনেকে আছেন যারা খাবার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ওপর যথেষ্ট জ্ঞান ছাড়াই এই ব্যবসায়ে পুঁজি খাটায়। রান্নায় দক্ষতার অভাব, কম বেতনে শেফ নিয়োগ, পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসিনতা এই ব্যবসাকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমি এগুলোর দিকে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। যেখানে সেখানে রেস্তোরাঁ খুলে বসার চেয়ে সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পর্যাপ্ত জানাশোনা নিয়ে এ ব্যবসার প্রসার ঘটানো উচিত।