স্ট্রবেরি হচ্ছে গোলাপ পরিবারের একটি সদস্য। ‘ফ্রাগারিয়া’ (সুগন্ধি) নামক একটি উদ্ভিদ থেকে এর জন্ম। যদিও বেরি নামটা এর সাথে জড়িত, তবে এটি আসলে একটি সত্যিকারের বেরি নয়। এটিই একমাত্র ফল যার বীজ বাইরে থাকে। আর এর বাইরে থাকা বীজগুলোই এটিকে এত আকর্ষণীয় করে তোলে। আমরা সাধরণত দেখে থাকি যে ফল পাকে গ্রীষ্মে আর বসন্ত ভরে যায় ফুলে ফুলে। কিন্তু এক্ষেত্রে স্ট্রবেরি পেকে যায় বসন্তে। আকৃতি ও রঙের কারণে এটি প্রেমের দেবীর প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
স্ট্রবেরির উৎপত্তি অজানা। সুতরাং, তারা দক্ষিণ এবং উত্তর আমেরিকার পাশাপাশি ইউরোপ এবং এশিয়ার আদিবাসী বলে মনে করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে এবং কানাডার প্রতিটি প্রদেশে স্ট্রবেরি জন্মে। ক্যালিফোর্নিয়া প্রতি বছর আশ্চর্যজনকভাবে এক বিলিয়ন পাউন্ড স্ট্রবেরি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। একটি বিশালাকার স্ট্রবেরি সর্বোচ্চ একটি আপেলের মতো বড় হতে পারে।
গিনেস বুক অফ রেকর্ডস অনুসারে, বিশ্বের বৃহত্তম স্ট্রবেরি শর্টকেকের আকার ছিল ৮২৭ বর্গফুট এবং ওজন ৬,০০০ পাউন্ড। এটি ফ্লোরিডার প্ল্যান্ট সিটিতে ১৯৯৯ সালে তৈরি করা হয়েছিল।
১৫ শতকের শেষের দিকে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে স্ট্রবেরি উৎপাদিত হয় । আগে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি উৎপাদন হত না। প্রকৃতপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর দিকে স্ট্রবেরির কথা উঠে আসে ভার্জিল এবং ওভিড নামক রোমান কবিদের মাধ্যমে। তবে, সেখানে তারা এটিকে একটি শোভাময় বা আনুষঙ্গিক হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন, খাবার হিসাবে নয়। বন্য স্ট্রবেরি প্রাচীনকাল থেকেই সারা বিশ্বের লোকেরা খেয়ে আসছে, তবে ফলগুলো হত ছোট, শক্ত এবং স্বাদের অভাব থাকতো।
১৩০০-সালের দিকে ইউরোপে স্ট্রবেরি চাষ করা শুরু হয়, যখন ফরাসিরা স্ট্রবেরিকে মাঠ আর প্রান্তর থেকে এনে বাগানে রোপণ করা শুরু করে। ১৫০০ সালের শেষের দিকে ইউরোপীয় বাগানে স্ট্রবেরি চাষ করা শুরু হয়। তারপর, ১৬০০-এর দিকে উত্তর আমেরিকার ভার্জিনিয়া স্ট্রবেরি ইউরোপে পৌঁছেছিল। এই নতুন তুলনামূলকভাবে শক্ত প্রজাতির বিস্তার খুব ধীরে ধীরে প্রচার পাচ্ছিলো এবং প্রশংসিত হচ্ছিলো। ১৭০০ এর শেষের দিকে এবং ১৮০০ এর শুরুর দিকে যখন এটি ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সময়ে ইংরেজ উদ্যানপালকরা বীজ থেকে নতুন জাত তৈরি করতে কঠোর পরিশ্রম করে যায় এবং ধীরে ধীরে তারা জাতের সংখ্যা তিন থেকে প্রায় ত্রিশ বা তারও বেশিতে উন্নীত করে। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, চীনে স্ট্রবেরির সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে ৩.২ মিলিয়ন টন, তারপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকো ১.০ এবং ০.৯ মিলিয়ন টন। ২০১৭ সালের মতে, মার্কেটপ্লেসে স্ট্রবেরির চাহিদা অত্যন্ত বেশি আর তাই এই সেক্টরে কাজ করে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন শ্রমিক।
স্ট্রবেরি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য
- ফলের বাইরের প্রতিটি বীজ আসলে ফুলের ডিম্বাশয় যার ভিতরে একটি বীজ থাকে। গড়ে স্ট্রবেরিতে প্রায় ২০০ টি বীজ থাকে। ফিলিপাইনের অন্যতম বিখ্যাত পানীয় হল ‘তাহো’ যা স্ট্রবেরি দিয়ে তৈরি।
- কমলা বা অন্যান্য ফলের তুলনায় স্ট্রবেরিতে বেশি ভিটামিন সি থাকে। এতে উ”চ মাত্রার নাইট্রেট রয়েছে এবং এটি পেশীতে রক্ত ও অক্সিজেন প্রবাহ বাড়ায়। এগুলো লাল রঙ ছাড়াও হলুদ, নীল, সাদা, কালো বা বেগুনি রঙের হয়ে থাকে।
- রোমানিয়ায় বিশ্বাস করা হয় যে, স্ট্রবেরি বিষন্নতা, জ্বর, নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ, অজ্ঞান হওয়া এবং লিভারের রোগ নিরাময় করতে পারে। স্ট্রবেরি ওজন কমাতেও সাহায্য করে, বিশেষ করে পেটের চর্বি কমাতে। অনেকে এটাও বিশ্বাস করেন যে স্ট্রবেরি হৃদরোগ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- বেলজিয়ামে একটি জাদুঘর রয়েছে যা স্ট্রবেরিকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
- এটি প্রেমের ফল হিসাবেও পরিচিত। কখনও কখনও অনেকে বলে থাকে যে, আপনি যদি একটি স্ট্রবেরিকে দুটি ভাগে ভাগ করেন এবং অন্য অংশটি অন্য ব্যক্তির সাথে ভাগ করেন তবে আপনার ভালবাসা সত্য হবে।
- সুইডেনে, এটিকে ঐতিহ্যবাহী ডেজার্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা গ্রীষ্মের মাঝামাঝিতে সেন্ট জনস ডে উপলক্ষ্যে এটিকে পরিবেশন করা হয়।
- স্ট্রবেরি সাধারণত চিনিতে মাখিয়ে মেটাক্সা নামক তরলে ডুবিয়ে রাখা হয়, যা গ্রীসে একটি সুন্দর মিষ্টি হিসেবে পরিচিত।
স্ট্রবেরি তার দুর্দান্ত টেক্সচার, মিষ্টি সুগন্ধ এবং সরসতার জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। এটি মস্তিষ্ককে দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে। এই ফলটি একটি আনুষঙ্গিক ফল হিসাবেও পরিচিত যা ডেজার্টের উপরে টপিং হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, খাবার প্লেট সাজাতেও। যেকোনো ধরনের পণ্যের জন্য স্ট্রবেরি সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্লেবারের নাম। হৃদয় আকৃতির এই জাদুকরী ফলটি যেন সবসময়ই আমাদের কাছে একটি প্রাকৃতিক ক্যান্ডির ভূমিকা পালন করে যা”েছ।