‘আতা গাছে তোতা পাখি ডালিম গাছে মৌ
এত ডাকি তবু কথা কও না কেন বৌ?’
এই ছড়া ছোটবেলায় আমরা সবাই পড়েছি। তাই ছোট থেকেই ‘আতা’র সাথে পরিচয় হয়ে গেছে আমাদের সবার। ফলটি সবুজ রঙের, শংকু আকৃতির এবং মিষ্টি স্বাদের। মিষ্টতায় ভরপুর এই ফলটিকে ইংরেজীতে কাস্টার্ড আপেল বলা হয় আবার সুইট আপেল নামেও পরিচিত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, আতা গাছের উৎপত্তি দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা দেখায় যে, এর উৎপত্তি মধ্য আমেরিকায়। এটি মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার মতো বিশ্বজুড়ে গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে জন্মে থাকে। ‘ফিনো দে জেট’ দক্ষিণ স্পেনের আতা ফলের একটি জাত, ইউরোপীয় প্রোটেক্টেড ডেজিনেশন অফ অরিজিন নামক পুরুষ্কার পেয়েছে।
আমেরিকান লেখক মার্ক টোয়েন এবং বিশিষ্ট উদ্ভিদবিদদের মতে, আতাকে বিশ্বের সেরা ফল হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর সতেজতা এবং বৈচিত্র্যের উপর নির্ভর করে ফলটি নরম এবং মিষ্টি, কমলা বা অম্লীয় স্বাদ নিতে পারে। এটি প্রায়ই একটি চামচ দিয়ে ঠান্ডা করে খাওয়া হয় এবং এই কারণে এর ডাকনাম হলো ‘আইসক্রিম ফল’। এটি ৭৯% জল, ১৮% কার্বোহাইড্রেট, ২% প্রোটিন এবং ১% চর্বি দ্বারা গঠিত। এতে থাকা ভিটামিন ই-৬ একজন ব্যক্তির মেজাজ উন্নত করতে বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করে কারণ এতে রয়েছে সেরোটোনিন এবং ডোপামিন যা নিউরোট্রান্সমিটারের ভূমিকা পালন করে। পরিশেষে, এতে রয়েছে ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুটেইন, যা ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো গুরুতর অবস্থার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তিকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে ।
একটি আতার বিজে ফল ধরতে সাধারণত ৩ থেকে ৪ বছর সময় লাগে / দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এর চাষ করা হয়। কলা, আনারস বা অন্যান্য গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফলের সাথে মিশ্রিত করে বিভিন্ন ধরণের পানীয় তৈরিতে আতা ব্যবহার করা হয়। লিমা, পেরুর রাজধানীর একটি আনন্দদায়ক এবং সুস্বাদু ডেজার্ট, সাদা আতা দিয়ে তৈরি করা হয়।
দুধ, দই এবং আইসক্রিমের সাথে মিশ্রিত আতা দিয়ে তৈরি মিল্কশেক লাতিন আমেরিকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় আতা একটি ফলের সালাদ এবং কাস্টার্ড পুডিং হিসাবেও পরিবেশিত হয়।