রেস্তোরাঁয় খাদ্য নিরাপত্তা বিধি মেনে চলা সম্পর্কে আমরা কী জানি? এই নিয়মগুলি মেনে চলার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করার জন্য আমরা সম্পূর্ণরূপে রেস্তোরাঁর মালিকদের এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিরল উপস্থিতির উপর নির্ভর করি। এটি একটি সাধারণ সমস্যা হওয়া সত্ত্বেও কয়েকটি রেস্তোরাঁর কাছে এই ধরনের সমস্যা মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত সরঞ্জাম রয়েছে।
খাদ্য জালিয়াতি: এর মানে কি?
খাদ্য জালিয়াতি হল এমন একটি কৌশল যা বোঝা যায় যখন কোনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ইচছাকৃতভাবে কপট পদক্ষেপ নেয় এবং নিয়ম লঙ্ঘনের মাধ্যমে অযাচিত সুবিধা লাভের জন্য ক্রেতাদের প্রতারিত করে। কৃষি-খাদ্য শৃঙ্খল আইনের বিরুদ্ধে এই বেআইনি পদক্ষেপগুলো মানব, প্রাণী বা উদ্ভিদের স্বাস্থ্য, প্রাণীর কল্যাণ বা পরিবেশের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে ‘পঁচা গন্ডারের মাংস’ কেলেঙ্কারিতে দেখা যায় ‘হাজী বিরিয়ানি হাউস’র মতো যারা দীর্ঘ সময় ধরে ‘পঁচা গন্ডারের মাংস’ দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে আসছে তাদের চালাকি। বিরিয়ানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা সারাক্ষণ দোকানে ভিড় করেন। ফলে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করতে এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে রেস্তোরাঁ মালিক। এই কেলেঙ্কারিটি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল:
ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ-এ ভেজাল সংক্রান্ত একটি গবেষণা ২০০২ সালে পরিচালিত হয়েছিল। ফলাফলগুলো হতবাক করার মত ছিল। মোট পরীক্ষা করা নমুনার অর্ধেকেরও বেশি ভেজাল ছিল শতভাগ বাটার অয়েল এবং বনস্পতি ডালডার নমুনায়, ৯০% কনডেন্সড মিল্ক/মিষ্টি, ৭২.৩% ঘি এবং মধু এবং ৫৭.২% গরুর দুধে ছিল ভেজাল।
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য জালিয়াতি:
একটি মামলাকে জালিয়াতি বা অসম্মতি হিসাবে বিবেচনা করা উচিত কিনা তা সনাক্ত করতে চারটি মূল অপারেটিভ মানদন্ড ব্যবহার করা হয়। যদি একটি মামলা চারটি মানদন্ডের সাথে মিলে যায়, তাহলে জালিয়াতির সন্দেহ থাকবে।
বাংলাদেশের নিয়ম লঙ্ঘন গ্রাহকদের প্রতারণা অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অভিপ্রায়
এই মানদন্ডগুলি জালিয়াতির রিপোর্ট করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে বর্তমানে যে নিয়মগুলি রয়েছে তার সাথে মিলে যায়:
১.বাংলাদেশের নিয়ম লঙ্ঘন: ১৯৫৯ সালের বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা আইন এবং প্রবিধান বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ এবং ১৯৬৭ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য বিধিতে কোডকৃত এক বা একাধিক নিয়ম লঙ্ঘন করা।
২.গ্রাহকদের প্রতারণা: এই মানদন্ডের মধ্যে গ্রাহকদের প্রতারণার কিছু রূপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে (উদাহরণ: পরিবর্তিত রঙ বা পরিবর্তিত লেবেল, যা প্রকৃত গুণমানকে রহস্যময় করে বা, আরও খারাপ ক্ষেত্রে)। অধিকন্তু, প্রতারণামূলক উপাদানটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হয়ে আসতে পারে কারণ পণ্যের কিছু প্রকৃত বৈশিষ্ট্য লুকানো থাকে (উদাহরণস্বরূপ, অঘোষিত অ্যালার্জেনের ক্ষেত্রে)।
৩.অর্থনৈতিক বৃদ্ধি: প্রতারণামূলক কাজ অপরাধীর জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসে।
৪.অভিপ্রায়: এই মানদন্ডটি বেশ কয়েকটি কারণের মাধ্যমে যাচাই করা যেতে পারে যা বিশ্বাস করার শক্তিশালী ভিত্তি দেয় যে নির্দিষ্ট অসম্মতিগুলি দৈবক্রমে ঘটছে না। উদাহরণস্বরূপ, যেমন একটি নিম্ন মানের সঙ্গে একটি উচ্চ মানের উপাদান প্রতিস্থাপন। এমনকি যদি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এমন একটি সম্ভাবনা থাকে যে একটি নিম্নমানের পণ্য দ্বারা দ্রব্যটি পরিবর্তিত হতে পারে, তবুও পণ্যটির উল্লেখযোগ্য অবমাননা প্রতারণামূলক কার্যকলাপ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ভিত্তি হিসাবে প্রমাণিত হবে।
প্রতারণামূলক কার্যকলাপ চিনতে সক্ষম হওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায়। শুধুমাত্র বিভিন্ন রূপগত পরিবর্তনের কারণেই নয়, বরং ইচ্ছাকৃত ক্রিয়াকলাপগুলোকে দুর্ঘটনাজনিত বা অনিচ্ছাকৃত কাজ বলে দাবি করায় তা সংশ্লিষ্ট খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা বা গুণমানকে সমানভাবে প্রভাবিত করতে পারে। নিম্নমানের পন্যের দ্বারা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পদার্থটির মৌলচ্যুতির সম্ভাবনা থাকা সত্বেও উল্লেখযোগ্য মৌলচ্যুত উপাদান তখনও থেকে যায় যা এই জালপ্রক্রিয়া প্রমাণে সমর্থ।
আমরা কিভাবে খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ করতে পারি?
বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের জন্য খাদ্যপণ্যের নিয়মিত নজরদারি, পর্যবেক্ষণ এবং এলোমেলো নমুনা সংগ্রহ করে থাকে। বাংলাদেশের রেস্তোরাঁ সেক্টর বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসা। তাই খাদ্য জালিয়াতি পরিচালনার সবচেয়ে টেকসই পদ্ধতি হবে যদি সমস্ত রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এই সমস্যাটি মোকাবেলায় একত্রিত হয়।
ডাইনবিডি রেস্তোরাঁগুলোকে নির্দেশনা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করতে পারে এবং বাংলাদেশে প্রকৃত খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি তৈরি করতে অবদান রাখতে পারে।