সুস্বাদু বাটার বান

by | জানু. 7, 2023 | Food Factory

Traditional Khichuri hobe

Packet Buns

বান বা বনরুটি বাংলাদেশে খুবই পরিচিত একটি খাবার। সকাল অথবা সন্ধ্যার নাস্তায় কিংবা কাজের ফাঁকে অনেকেই চা-কফির সাথে বান খেতে পছন্দ করেন। বর্তমান বাজারে, স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের বান পাওয়া যায়। দেশের বেশকিছু বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের বেকারির মাধ্যমে আমাদের জন্য মানসম্মত রুটি প্রস্তুত করছেন। ব্রেড বাংলাদেশর বেকারি ইন্ড্রাস্ট্রিতে অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করে আছে। এসব ব্রেড ফ্যাক্টরিগুলো তাদের যাত্রা শুরু করেছিলো সব শ্রেণীর মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্য নিয়ে। মূলত, তারা তাদের বেকারি আইটেমগুলো স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত উপাদান দিয়ে প্রস্তুত করে থাকে। ফলে তারা স্বল্পমূল্যে মানসম্মত খাদ্য সরবরাহ করতে পারে।

কখনও কখনও ব্রেড ব্যবসায়ীরা তাদের রুটি জাতীয় খাবারগুলোকে কিছু নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের আওতায় বাজারজাত করার পরিকল্পনা করে থাকে। এসব পরিকল্পনার ফলে বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে উচ্চশ্রেণি পর্যন্ত ব্রেডের মত প্রয়োজনীয় পণ্য পৌছে যাচ্ছে সহজেই। বাংলাদেশের হবিগঞ্জ, ঘোড়াশাল ও সিলেটসহ দেশের আরো অনেক জেলায় বানিজ্যিকভিত্তিতে প্রস্তুতের জন্য ব্রেডফ্যাক্টরি স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন খাদ্য নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও খাদ্যমান বজায় রাখার জন্য এসব কারখানার রয়েছে আধুনিক পরীক্ষাগার। এখানে প্রতিটি স্তরে খাদ্য পরীক্ষা করেই বাজারে ছাড়া হয়। স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর পণ্য সরবরাহের কারণে জনসাধারণের কাছে অনেক কোম্পানির গ্রহণযোগ্যতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রসিদ্ধ কোম্পানিগুলো প্রথম থেকেই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তাদের বান উৎপাদন করে আসছে। কিছু ব্র্যান্ডের বানের জনপ্রিয়তার কারণে তারা তাদের বানের স্বাদের বৈচিত্রিতা সম্প্রসারণে উদ্যোগী হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে বাটার বান, পিনাট বাটার বান, চকলেট বান, পিৎজা বান, জেলি বানসহ বেশকিছু বৈচিত্রপূর্ণ বান। তাই ক্রেতারা তাদের স্বাদ অনুযায়ী বান উপভোগ করার সুযোগ পায়।

বাটার বান তৈরির মূল উপাদান হলো ময়দা। প্রথমে মিক্সচার মেশিনে ময়দা ঢালা হয়। তারপর এতে নির্দিষ্ট পরিমান পানি দেওয়া হয়। ময়দা ও পানি একত্রে মিশে একটি ডো হয়; এটাকে ‘গ্লুটেন বলে। এরপর ডো’তে ঈস্ট যুক্ত করা হয়। ঈস্ট গাঁজন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করে। ফলে ময়দার মিশ্রণটি ফুলে উঠতে থাকে। এরপর একে একে ডো’তে প্রয়োজনীয় ডিম, দুধ, চিনি, লবণ ও মাখন দেওয়া হয়।

ডোটিকে মিক্সচার মেশিনে ভালভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেশানোর প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশে যায়। ডো প্রস্তুত করার কাজটি প্রায় ১২ মিনিট ধরে চলে।

Bun’s dough needs to be mixed properly

এরপর ময়দার ডো’কে একটি ডিভাইডারের মধ্যে দেওয়া হয়, যা এটিকে নির্দিষ্ট ওজন অনুযায়ী ভাগ করে কেটে ফেলে। এরপর ডো’টি একটি প্রেসিং মেশিনের ভিতর দিয়ে যায়। এখানে চাপের কারণে ডো’টি নির্দিষ্ট পুরুত্বে প্রসারিত হয় এবং এর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়। এরপর চাপা ডো’টিকে ট্রিমিং মেশিনের মাধ্যমে মসৃণ করে এটিকে চারকোণা আকৃতি দেওয়া হয়। এরপর ডো’টি ঢোকে ফরমিং মেশিনের ভিতর। এখানে কনভেয়ার বেল্ট থাকে যেটি আসলে একটি  অনবরত ঘুরতে থাকা প্রসারিত বাইসাইকেলের চেইনের মত। এই কনভেয়ার বেল্ট ডো’কে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে থাকে। এসময় প্রেসিং রোলার দিয়ে ডো’টিকে লম্বা করে রোল করা হয়। 

রোল করা ময়দার ডো’টি কাটার মেশিন দ্বারা নির্দিষ্ট আকার অনুযায়ী ছোট ছোট করে কেটে নেওয়া হয়। এরপর একেকটি টুকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাজিয়ে রাখার মেশিনে পরপর সজ্জিত হয়ে যায় এবং একে একে বানগুলো আলাদা ছাঁচের ভেতর বসে যায়। ছাঁচটি একটি স্তরযুক্ত কনভেয়ারে প্রবেশ করে। কনভেয়ারটি অত্যাধিক তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাযুক্ত কেবিনেট দ্বারা আবদ্ধ থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাঁজন প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। ফলে বানগুলো আরো নরম হয়। 

এখান থেকে বানগুলো চলে যায় বিশালাকৃতির ওভেনে। এখানে ২২০-২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বানগুলো বেক করা হয়। এরপর ওভেন থেকে বের করে বানগুলোকে বাতাস দিয়ে ঠা-া করা হয়। এই বেকিং ও কুলিং প্রক্রিয়ায় প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। ঠা-া হয়ে গেলে বানগুলোকে মাঝখান থেকে কেটে এর ভেতর প্রক্রিয়াজাত মাখনের ক্রিম দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে বানগুলোকে প্যাকেটে ঢুকিয়ে বাজারে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। 

বান প্রস্তুতের প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো স্পর্শকাতর বিষয় জড়িত থাকে। এর যেকোন একটি বিষয় বানের গুণগত মানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে এর প্রতিটি ধাপে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখতে হয়। এছাড়া উপাদান বাছাই থেকে প্যাকেটজাত করা পর্যন্ত প্রত্যেক ধাপে গুণগত মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। যেহেতু বান প্রস্তুতের পর এতে ৪০% আর্দ্রতা থাকে, তাই বানগুলোতে যাতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে না পারে সেজন্য আলট্রা ভায়োলেট রে দ্বারা জীবাণুমুক্ত করা হয়।       

বাংলাদেশে এসব বাটার বান একটি মুখরোচক ও সুস্বাদু খাবার হিসেবেই পরিচিত। ছোট বড় সকলের কাছেই এটি অনেক প্রিয়। কমদামে যেকোন সময় যেকোন স্থানে ক্ষুধা লাগলে সহজ সমাধান হিসেবে বাটার বানকেই মানুষ প্রথমে মনে করে।

Related Post
Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!