ওয়েফার একটি খাবার যেটা সব বয়সের লোকেদের পছন্দের তালিকায়, কেউ সেটা অস্বীকার করবে না। ওয়েফার একধরনের মুচমুচে বিস্কুট জাতীয় খাবার যেটাতে দুয়ের বেশী স্তর থাকে, হ্যাজেল নাটের মত বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এটা বানানো হয়ে থাকে। এই স্তরগুলো খুবই পাতলা হয় এবং কয়েকটা পাতলা স্তরের সমন্বয়েই তৈরী হয় সম্পূর্ণ ওয়েফার।
ওয়েফার প্রাচীর মিশরের একটি খাদ্য। মিশরীয়রা ময়দা (এক প্রকার আদিম গম ইমার) দিয়ে তৈরি করতো এটি। ওয়েফার শব্দটি এসেছে ওয়াবা শব্দ থেকে, যেটার অর্থ মৌচাক আর সেজন্যই হয়তো ওয়েফারের উপরের স্তর দেখতে মৌমাছির বাসার মতো লাগে। ১৮৯৮ সালে ভিন্নেসা জোসেফ ম্যানার প্রথম পুরো বিশ্বে ওয়েফার নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং একটি প্রস্তুত প্রনালী দেন। তখনকার নেপোলিটার ওয়েফারগুলো ৭.৫ গ্রাম এর, ৫ স্তর বিশিষ্ট এবং হ্যাজেলনাট দিয়ে ভরা থাকত।
ওয়েফারের প্রতি কামড়ই একটি অন্যরকম সংবেদনীয় অভিজ্ঞতা দেয় যখন এটা খাওয়া হয়। এটি খুবই হালকা একটি খাবার কিন্তু লোভনীয়। কখনো কখনো এটা শুধু খাওয়া হয় আবার কখনো চকলেট বা আইসক্রিমের সাথে খাওয়া হয়। ওয়েফারের মূল উপকরণ হলো ময়দা আর পানির মিশ্রণ যাতে থাকে তেল, চিনি, লবন এবং সোডিয়াম কার্বোনেট। ইস্ট সোডিয়াম কার্বনেটের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় অথবা এর সাথে মিশিয়েও তৈরী করা হয়।
এটা বানাতে তাপ, গ্যাস আর পর্যাপ্ত চাপের প্রয়োজন হয় আর পানির পরিমান ৫০-৬০% থেকে ১% এ নিয়ে আসতে হয় প্রস্তুত সময়কালে। বিভিন্ন বেকারী বা ইন্ডাস্ট্রিতে এটি প্রস্তুতের সময় প্রথম একটি খামির করে নেয়া হয় যেটা হয় তরল জাতীয় এবং কিছুক্ষন রেখে দেয়া হয়। তারপর ছাঁচযুক্ত মেশিনে খামিরগুলো ঢেলে দেয়া হয়, এটা চাপ দিয়ে একটা পাতের মতো ওয়েফার তৈরী করে। তারপর সেগুলো একটা বেলবের ভেতর দিয়ে যায় আর মাখনের মতো বিভিন্ন গন্ধযুক্ত আবরনে মাখানো হয়। সেখান থেকে গিয়ে পর পর ৬ টি ওয়েফার পাত জমা হয়। ৬ টি ওয়েফার পাত জমা হওয়ার পর সেগুলো একটা পাত্রের ভিতর দিয়ে যায় আর সবগুলো একসাথে জোড়া লেগে যায়। তারপর সেগুলো নির্দিষ্ট আকারে কাটা হয় মেশিন দিয়ে। এগুলো একটার পর একটা চলতেই থাকে। এরপর একটা বড় মেশিনের ভেতর দিয়ে ওয়েফার টুকরোগুলো যায় আর তাদের উপর চকলেট/স্ট্রবেরি/ভ্যানিলা ক্রিমের আবরন দেয়া হয় আর ঠান্ডা করা হয়। তারপর এগুলো প্রস্তুত বাজারজাত করার জন্য। তারপর মানুষ দিয়ে ভালো খারাপ বাছাইকরন শেষে প্যাকেটজাত করা হয়। প্যাকেট করা হয়ে গেলে গায়ে দাম ও উৎপাদন তারিখের লেভেল বসানো হয়। এরপরই এগুলো পুরোপুরি তৈরি বাজারে পাঠানোর জন্য।
বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানাতে ওয়েফার এসব পদ্ধতি অবলম্বন করে সহজ উপায়ে তৈরি করা হয়। ওয়েফার মজাদার স্বাদের ও কুড়মুড়ে হবার কারণে যেকোন বয়সের মানুষের কাছে এর অবিস্মরণীয় জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই সুস্বাদু খাবারটি তৈরীতে।