বানিজ্যিকভাবে সবজি কৌটাজাত করণ বা ক্যানিং হলো সবজি সংরক্ষণের একটি তাপীয় বায়ুশুন্যকরণ উন্নত পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় মূলত শবজিকে টিনের কৌটা বা জারে রেখে ঢাকনা দিয়ে কৌটার মুখ হালকাভাবে বন্ধ করে উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয়। এই উত্তপ্ত অবস্থায় সবজিতে থাকা মাইক্রো অর্গানিজম বা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়, এনজাইম বিনষ্ট হয়। কৌটার মধ্যে সবজি আবদ্ধ থাকায় বাতাসে থাকা জীবাণু ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনা। তাই সবজি সংরক্ষিত থাকে।
আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের সবজি, বিশেষ করে কচি ভুট্টা, মটরশুটি, টমেটো, আলু এই ক্যানিং প্রক্রিয়ায় সংরক্ষন করা হয়ে থাকে এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত যে সব্জিকে সংরক্ষণ করা হবে তা সংগ্রহ কর ধুয়ে নিতে হয়। এরপর ব্লাঞ্চিং করতে হয়। এই ধাপটিতে মূলত সবজিতে ফুটন্ত পানি যোগ করে কিছু সময়ের জন্য সিদ্ধ বা ফুটিয়ে নেওয়া হয়। এরপরের ধাপে প্রেসার ক্যানে রেখে নির্ধারিত তাপমাত্রায় এগজস্টিং করা হয়। এই ধাপ শেষে ১১৫°-১২১° সে. তাপমাত্রায় রিটর্টিং করা হয়। এই সকল ধাপ শেষে কৌটা শীতলীকরণ ও লেবেলিং করে গুদামজাত করা হয়। প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে না পারলে সবজিতে ক্লসট্রিডিয়াম বটুলিনাম ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটতে পারে যা থেকে টক্সিন যুক্ত হয়। এই অবস্থাকে বটুলিজম বলে। বটুলিজমের কারণে ফুড পয়জনিং এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা উচিত।
ক্যানিং প্রক্রিয়ার ফলে সবজির পুষ্টিমানের কোনো পরিবর্তন হয় না। সকল ভিটামিন এবং মিনারেলস এর গুনগত মান বজায় থাকে। তাই কৌটাজাতকরণ সবজি খাওয়া একেবারেই নিরাপদ। এবং কৌটাজাতকরণ সবজিগুলো, রান্নার সময় ঝামেলাবিহীনভাবে ব্যবহার করা যায় যা অনেকটা সময় বাচিয়ে দেয়। তাছাড়া এই প্রক্রিয়ার কারণে শাক-সবজির পচন রোধ করাও সম্ভব। ক্যানিং ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও বিদেশে ক্যানিং করা খাদ্য রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
আমাদের দেশে এখন ক্যানিং প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবেই চালু রয়েছে। শুধু সবজি নয়, মাছ,মাংস এবং ফলমূলের ক্ষেত্রেও ক্যানিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আগামীতে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে এই প্রক্রিয়া আরো সহজতর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।