সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার ইচ্ছা হলেই আমার সেন্টমার্টিনের কথা মনে পড়ে। কত রকমের মাছ ভাজা পাওয়া যায় সেখানে তা দেখতেই ভালো লাগে, বিশেষ করে কোরাল বারবিকিউ, টুনা ফিস, রূপচান্দা। অনেক ঝাল-মসলাযুক্ত এই খাবারের প্রেমে আমি পড়েছি আমার সেন্টমার্টিনের প্রথম ভ্রমণে। ভ্রমণ করা একটা অসাধারণ নেশা, প্রকৃতির একটা আলাদা টান আছে যা ভ্রমণের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়।
আমার জীবনের প্রথম ভ্রমণটা ছিল সেন্টমার্টিনে, আর সেখানে গিয়ে আমি অনেক ধরনের নতুন খাবার উপভোগ করেছিলাম। একেক জায়গার মানুষের জীবন যাত্রা একেক রকম, পাশাপাশি খাবার রান্নার ধরণ ও খাবারের স্বাদও ভিন্ন। প্রথম সব কিছু স্মরণীয় হয়ে থাকে, আর সেটা যদি হয় সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ তাহলে তো কথাই নেই, আহ! স্বপ্নের দ্বীপ। সেখানে যাবার আগে সেন্টমার্টিন যে একটা প্রবাল দ্বীপ এতটুকুই আমি জানতাম। তা ছাড়া আর কোন তথ্যই আমার জানা ছিলো না। আসলে ইচ্ছা করে জানতে চাইনি। আমি ধারণা ছাড়া কোথাও গিয়ে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দ উপভোগ করতে পছন্দ করি।
আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর পর আমরা একটু ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়লাম সৈকতের টানে। মন আর বাঁধা মানছিলো না। কিন্তু, পেটের ডাক সামলাতে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে নিতে সমুদ্রের ধারের খাবার দোকানগুলোতেই হামলা দিলাম। মুক্ত বাতাস আর ঢেউয়ের গর্জন শুনতে শুনতে আমরা অর্ডার করে ফেললাম সামুদ্রিক মাছ। সাগরে এসেছি আর সামুদ্রিক মাছ খাবো না তা তো হয় না। কোরাল মাছ ভুনা, রুপচাঁদা মাছ ভাজা, টুনা মাছ ভাজা আর সাথে মুরগি ভর্তা নিলাম। মজার ব্যাপারটা এখানেই ঘটলো। সমুদ্রের সাখে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার বিষয়টা পরিকল্পিত ছিলো।
কিন্তু, হঠাত এই মুরগি ভর্তাটা এসে সব চিন্তা উল্টেপাল্টে দিলো। মুরগি ভর্তা এর আগে আমি কখনো খাইনি। শুনতে আজব লাগলেও নানান মাছেদের ভিড়ে ঐ আলাদা রকমের খাবারটা আমার কাছে দারুণ লেগেছিলো।
সমুদ্রের পাশে বসে খাওয়ার তৃপ্তি আমি সেই প্রথমই পেয়েছি। আর হয়তো কোথাও এমনটি পাবো না। বিকেলে সমুদ্রের পাশে বসে এক কাপ চায়ের সাথে সূর্যাস্ত দেখা, সব সুখ বুঝি এইখানেই! সন্ধ্যায় খেলাম কাঁকড়া ভাজা, চিংড়ি মাছ ভাজা, কোরাল বারবিকিউ। খাবারগুলো খুবই মজার ছিলো। এই রান্নার স্বাদ আর মসলার ঘ্রান আমি এখনো ভুলতে পারিনা। আকাশের তারা দেখার জন্য সেন্টমার্টিন সেরা আর সাথে বাতাসে ঢেউ এর শব্দ কানে এসে যখন লাগছিলো, মনে হচ্ছিল প্রকৃতি গান গাইছে।
সকালে উঠে নাস্তা সারা হলো আলুর ভর্তা, টুনা মাছ ভর্তা আর সেই মজার মুরগি ভর্তা দিয়ে। আর মনে মনে ভাবছিলাম এই খাবারটি বাসায় ফিরে খেতেই হবে। বাংলাদেশ এমনিতেই একটি সুন্দর দেশ তার ওপর যদি বিভিন্ন এলাকার খাবার চেখে দেখার সুযোগ পাওয়া যায় তবে আর কি লাগে। আমি ভ্রমণপ্রেমী মানুষ তখন হুট করেই পেটুক হয়ে যায়। তবে হ্যা, সেন্টমার্টিনের এই অপ্রত্যাশিত খাবারের স্বাদ আমার মুখে লেগে থাকবে বহুদিন।