খাবারের বেলায় আমি বেশ বেছে খাওয়া ধরনের মানুষ। সাধারণত ভিন্ন ধরনের খাবারের ওপর আস্থা রেখে তা নির্দ্বিধায় খেয়ে নেওয়াতে আমি তেমন স্বস্তি পাই না। তাই, যেখানেই যাই সেখানে কিছু নির্দিষ্ট এবং পরিচিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু ট্যুর শুরু করার পর থেকে সবকিছু বদলে যেতে থাকে। ২০১৮ সালে, আমি প্রথমবারের মতো কক্সবাজার ঘুরতে যাই এবং আমি অবশ্যই সেই সফরটিকে আমার জীবনের একটি স্মরণীয় সফর হিসেবে বলব কারণ আমি প্রথমবার ‘লইট্টা ফ্রাই’ এবং ‘ক্র্যাব ফ্রাই’ খাবার চেষ্টা করেছি। আমি প্রমেই বলেছিলাম, সহজেই যেকোনো খাবার খেতে পারি না, তাই লইট্টা আর কাঁকড়া ভাজা খাওয়া আমার জন্য অসাধ্য সাধন করার মত একটা কাজ ছিলো।
আমার লইট্টা ও কাকড়া খাওয়ার পেছনে অবদান আমার বন্ধুদের। ওরা অনেকটা জোড় করেই আমাকে এগুলো খেয়ে দেখতে বাধ্য করে। যদিও এখন আমি ওদেরকে ধন্যবাদ জানাই এগুলো খেতে জোড়াজুড়ি করার জন্য। কক্সবাজারের লইট্টা এবং কাঁকড়া ভাজা হল সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। চট্টগ্রামে, বেশিরভাগ লোক লইট্টা মাছ (বোম্বে ডাক) পছন্দ করে। সাধারণত চিটাগাং-এর মানুষ এটি তরকারি এবং ভাজা দু’রকমভাবেই খেয়ে থাকেন। তবে একজন বহিরাগত হিসাবে আমি বলব যে, লইট্টা রান্নার চেয়ে ভাজা হলে সবচেয়ে মজা লাগে।
আমি সবসময় লইট্টা একটি নরম এবং আঠালো মাছ হিসেবে ভাবতাম এবং আরো ভাবতাম যে এগুলো কারও প্রিয় হতে পারে না। কিন্তু আমার স্বীকার করা উচিত যে আমি ভুল ছিলাম কারণ লইট্টা ফ্রাই সত্যিই একটি অসাধারণ খাবার। ভাজার মূল আকর্ষণ হল বাইরের মচমচে অংশ। বাইরে থেকে বেশ শক্ত কিন্তু এটিতে একটি কামড় দেয়ার সাথে সাথেই নরম অংশটিও আপনার পছন্দ হবে। সেখানকার লোকেরা রান্নার সময় বাইরের অংশের জন্য যে ভেষজগুলি ব্যবহার করে তা অন্য যে কোনও মাছের ফ্রাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একটি কামড় দিলেই আপনিও আমার মত একজন লইট্টা ফ্রাই প্রেমী হয়ে উঠবেন এটা আমি নিশ্চিত বলতে পারি। লইট্টা ফ্রাই কক্সবাজারের উল্লেখযোগ্য খাবারগুলোর মধ্যে একটি এবং বেশিরভাগ পর্যটকদের প্রিয়। এটি একটি ‘মাস্ট হ্যাভ ডিশ’, যা একজনের জীবনে একবার হলেও খেয়ে দেখা উচিত।
কাঁকড়ার মাংস কিছুটা মিষ্টি হওয়ায়, এতে ব্যবহার করা বিভিন্ন মসলার সাথে হালকা মিষ্টতা পুরোপুরি ভারসাম্যপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে, আমি কাঁকড়াকে তার অদ্ভুত চেহারার জন্য অপছন্দ করতাম। আমি ভাবতাম কিভাবে মানুষ সহজে এই কঠিন খোসাযুক্ত ক্রাস্টেসিয়ান খেতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমিই কাকড়া ফ্রাই এর বড় ফ্যান হয়ে গেছি।
কাঁকড়া ভাজার স্বাদ নির্ভর করে মসলার সঠিক ব্যবহারের উপর। বিভিন্ন ধরনের মশলা এর স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। টাটকা কাঁকড়া ফ্রাইয়ের স্বাদ আলাদা। কক্সবাজারে তাজা কাঁকড়া পাওয়া সহজ তাই যে কেউ স্বাদের পার্থক্য লক্ষ্য করবে। যাই হোক, যারা কখনো কাকড়া খাননি, কক্সবাজারে গেলে এটি অবশ্যই তাদের টেস্ট করে দেখা উচিত।
কিছু লোকের জন্য, লইট্টা ফ্রাই এবং কাঁকড়া ফ্রাই বেশ অরুচিকর খাবার, বিশেষ করে কাঁকড়ার মাংস। তবে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, তারা যদি একবারের জন্য এই খাবারগুলো খেয়ে দেখেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে।