বাক্সবন্দী অমৃত সন্তুষ্টি

by | জানু. 19, 2023 | Blog

Traditional Khichuri hobe

Kids love different tasty foods in their tiffin box

স্কুল টিফিন হচ্ছে স্কুলে অবস্থানকালে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টি চাহিদা মেটানো এবং স্বাস্থ্যের মান উন্নয়নের জন্য যে খাবারটির ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণত স্কুলে পাঠদানকালে মধ্যবর্তী বিরতির সময় এ খাবার পরিবেশিত হয়। তবে এই টিফিনের বিরতিতে তৈরি হয় অনেক গল্প। সকালে টানা ক্লাস করে ক্ষানিক বিরতিতে যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়। সাথে যদি থাকে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার তাহলে তো কথাই নেই। এ যেন সোনায় সোহাগা।

টিফিন শব্দটি শুনলেই মনে পড়ে যায় সেই আশি নব্বই দশকের স্বর্নযুগের বহুল প্রচলিত টিফিন সংস্কৃতির কথা। স্কুল জীবনের ব্যাগের বোঝাসহ সেই সময়ের টিফিন পিরিয়ডটি অনেকের কাছেই পুরনো দিনের কথা অথবা জীবনের অনেক স্মৃতির কথা হিসেবে স্মরনে আসে। টিফিন বাক্স শব্দটি কিছুটা অদ্ভুত। এর কথা মানেই হারানো দিনের কথা, এর কথা মানেই ভাগাভাগি করে বা কাড়াকাড়ি করে খাওয়ার কথা, টিফিনের কথা উঠলেই মনে হয় জীবনে কত সময় শুধু নষ্ট হয়েছে এই ভেবেই যে আজকের টিফিনের মেনু কি হবে। শিক্ষাজীবনের অনেক গল্প রয়েছে টিফিন বিরতিতে। মিষ্টি বন্ধুত্ব, খেলাধুলা, গল্পে মশগুল, গানের প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি এই ধরনের অনেক গল্প রয়েছে টিফিন বিরতিতে। যা স্মৃতির পাতায় অসংখ্য রঙিন পৃষ্ঠায় লেখা।

স্কুল টিফিনের কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন: শিশুর প্রাত্যহিক আহার্যের সাথে অধিক পুষ্টি সম্পন্ন নতুন খাবারের সমন্বয় সাধন, স্বাভাবিক বর্ধনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরবরাহের মাধ্যমে শিশুর বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ, প্রাত্যহিক কাজের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে উৎসাহিত করা। আগের যুগের মা বাবাদের টিফিন নিয়ে ভাবার খুব একটা ফুসরত ছিল না। এতগুলো সন্তান, কাকে নিয়ে ভাববে? তবে বর্তমানে সচেতন মা বাবারা তাদের শিশুদের সকল বিষয় নিয়ে ভাবেন। যেহেতু শিশুদের বর্ধনের একটি চরম সময় হচ্ছে প্রাক স্কুলগামী এবং স্কুলগামী সময় তাই বাবা মা’র ভাবনা কী করে এসময় শিশুকে সঠিক পুষ্টিকর খাবার দিয়ে শিশুর বেড়ে ওঠা ঠিক রাখা যায়। বর্তমান মা বাবারা কর্ম ব্যস্ততার জন্য তাদের ছোট্ট সোনামনিকে টিফিনের জন্য কিছু তৈরি করে দিতে না পারলেও কিনে দেন প্যাকেটজাত খাবার।

তবে টিফিন শুধু ব্যালান্স ডায়েড হলেই হবে না। এতে যাতে বৈচিত্রতা থাকে, আকষর্ণীয় হয়, শিশুর যাতে পছন্দ হয়, শিশুর গ্রহণ-উপযোগী হয় সেদিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। একই টিফিন শিশুরা প্রতিদিন পছন্দ করে না। তাই পুষ্টি সম্পন্ন মজার মজার খাবার শিশুর সামনে উপস্থাপন করতে হবে। স্কুলে শিশুরা সহপাঠীদের নিয়ে খেতে ভালোবাসে তাই শিশুর টিফিনের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। এতে করে টিফিনের প্রতি শিশুর আগ্রহ বেড়ে উঠবে। সারাদিনের অর্ধেকটা সময় শিশুদের কাটাতে হয় স্কুলে। তাই তাদের খাবার চাহিদা পূরণে পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। পুষ্টিহীন শিশু যেহেতু শারীরিকভাবে দুর্বল হয় সেহেতু তাদের মেধাও পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে পারে না। তারা জাতির ভবিষ্যত না হয়ে জাতির বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

অল্প সময়ে খাওয়া শেষ হবার মতো সুষম খাদ্য টিফিনে থাকা উচিত। অবশ্যই টিফিনগুলো ঘরে তৈরি হতে হবে এবং খাদ্য উপাদানের সব এতে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। যেমন ফিসফিংগার, মাছের চপ, নুডুলস চপ, মাংসের কাবাব, চিকেন ফ্রাই, সবজি নুডুলস, টোনা মাছের কাটলেট, সবজি পাকড়া ইত্যাদি। ফিস বা মিট, সালাদ বার্গার, সবজি, মাছ, ডিম, মাংস একেকদিন একেকটি দিয়ে তৈরি হতে হবে। স্যান্ডউইচ, চিকেন নাগেট ঘরে তৈরি হতে হবে। চিকেন ললিপপ, সবজি মাংসের শাশলিক মিট, চিকেন এবং বিফ বল। সবজি চিকেন রোল, ব্রেড টোস্ট, বিভিন্ন ধাপের সমুচা, পুর ভরা সবজি ও বিভিন্ন ধরনের ফল একেকদিন একেকটি দিলে শিশু আগ্রহী হয়ে তার টিফিন খাবে। এতে বেড়ে ওঠার সকল উপাদন সঠিক পরিমাণে পাবে এবং শিশু সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।

করোনা ভাইরাসের মত মহামারী থেকে বের হয়ে এসে পৃথিবী হচ্ছে স্বাভাবিক। খুলতে শুরু করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনেকটা দিন শিক্ষার্থীরা তাদের এই পরিচিত টিফিন থেকে দূরে থেকেছে। নতুন করে শুরুটা যেন স্বাস্থ্যকর হয় সে দিকটা ভাবতে হবে অভিভাবকদের। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। বর্তমানে ব্যস্তজীবনে পিছনে ফিরে তাকালে মনে পড়ে যায় স্কুল জীবনের সেই সেরা সময় টিফিন পিরিয়ড। সারাদিনের একঘেয়েমি পড়াশোনার পাশাপাশি সুস্বাদু খাবার, গল্প গুজব, খেলাধুলা সব মিলিয়ে যেন একটা সুন্দর আগামী পায় একটা শিশু এই প্রত্যশাই সকলের। 

Related Post
ফিফার জ্বর

ফিফার জ্বর

‘ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আবেগ’- কথাটি প্রতিটি বিশ্বকাপেই সত্যি হয়। ‘ফুটবল’...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!