বলা হয়ে থাকে যে, রোমান যুগে ফ্রূটকেকের প্রথম উদ্ভাবন হয়। ধর্মযুদ্ধের সময় যখন সৈনিকদের দূর পথ পাড়ি দিতে যেতে হত, তখন এই ফ্রূটকেকই একমাত্র খাবার ছিল যা গ্রহন করলে দীর্ঘ সময় শক্তি পাওয়া যায়। রোমান রাঁধুনিরা বিভিন্ন ধরনের বাদাম, কিশমিশ, মিষ্টি কুমড়ার বীজ ও নানান রকম শুকনো ফল এবং শুকনো রুটি দিয়ে এই কেক তৈরি করা শুরু করেন। এইসব উপাদানকে তারা একসাথে মিশিয়ে, তরল করে এরপর তাপ দিয়ে শুকিয়ে শক্ত করে তৈরি করত। এর রঙ ইটের মত দেখা যেত আর তেমনই শক্ত হত বটে, যাতে করে সৈনিকরা দূর পথ পাড়ি দিতে পারে।
ফ্রূটকেকের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ইংল্যান্ডে। সতের’শ শতাব্দীতে ইউরোপ থেকে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত সকল বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিন ও ধর্মীয় উৎসবে ফ্রুটকেকের ব্যাপক প্রচলন ছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীতেও ফ্রূটকেকের প্রচলন রয়েছে, কেননা এর সাধু পরিবেশন খুবই মনমুগ্ধকর। আপনি জানেন কি, ইংল্যান্ডের রাজকুমার উইলিয়াম ও তার সহধর্মিণী কেট মিডল্টন তাদের বাগদানের অনুষ্ঠানে এই ঐতিহ্যবাহী সাধারণ ফুটকেকই বেছে নিয়েছিলেন?
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ফ্রুটকেক প্রচলিত আছে। দিনের পর দিন এর ধরণ পরিবর্তিতও হচ্ছে। নানান রকমের ফল, বাদাম, কিশমিশ, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টানের সংমিশ্রনে তৈরি হয় এই সুস্বাদু খাবারটি। পাশাপাশি এতে বিদ্যমান রয়েছে নরম তুলতুলে রুটির অসাধারণ স্বাদ। ফ্রূটকেকে ভরপুর পুষ্টি, শক্তি, আর স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি এমন একটি খাবার যা মানুষকে দূরপাল্লার যাত্রায় দীর্ঘসময় ধরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।
উনবিংশ শতাব্দী থেকেই সুইস কলোনির উপনিবেশে বসবাসকারীগণ ফ্রূটকেক তৈরি করে আসছে এবং এখনও অব্দি তা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে ৭০ শতাধিক ফ্রূটকেক তৈরি হয় শুস্ক ফল ও নানা রকম বাদাম থেকে; আর ফলের মধ্যে থাকে শুকনো পেঁপে, আঙুর, আনারস ও আখরোট। সকল উপাদান মাখন দিয়ে মিশিয়ে একসাথে তাপ দিয়ে তৈরি করা হয় বাদামী রঙের মজাদার এই ফ্রূটকেক। কেক আরও সুস্বাদু করার জন্য এর উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় মধু ও আখরোট। ব্যবসার জন্য যে সকল ফ্রূটকেক তৈরি করা হয়, সেগুলো তৈরি হয় বিশাল পরিসরে হাতের স্পর্শ ছাড়াই সয়ংক্রিয় মেশিনের সাহায্যে।
ফ্রূটকেক এমন একটি খাবার যা পরিবেশন করা হয় আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দিয়ে। এ কথা শুনে মনে হতে পারে, ‘আমি কি ঠিক শুনলাম?’ হ্যা, আপনি ঠিকই শুনেছেন। এর সাথে জড়িয়ে থাকে বিশেষ অনুভূতি। সব রকমের প্রাকৃতিক উপাদানের উপস্থিতি আছে এতে। এই খাবারটি সকালের মনোরম পরিবেশের সাথে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে খুব সহজেই মানিয়ে যায়। রাস্তাঘাটে মানুষ হালকা ক্ষুধা নিবারণে কেক কিনে থাকে কারণ এটি যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়ে প্যাকেট ছিড়েই সাথে সাথে খাওয়া যায়। রেফ্রিজারেটরের মাধ্যমে এটি দীর্ঘ সময় জুড়ে সংরক্ষণ করা সম্ভব।
আমাদের দেশে সকল বয়সের মানুষের কাছে সুপরিচিত একটি খাবার হিসেবে পরিচিত এই ফ্রূটকেক। ভ্রমণের সময় মানুষে পছন্দের খাবারগুলোর মধ্যে এটিই প্রথমে থাকে। বাঙালিরা ভ্রমণের সময় এই খাবারটি বেছে নেয় ঝামেলামুক্ত থাকার জন্য। এটি যেমন সহজলভ্য তেমন হালকা ক্ষুধার চটজলদি সমাধান। সকালের নাস্তা কিংবা অন্য যেকোনো সময় এটি চায়ের সাথে বেশ জনপ্রিয়। এক কথায় বলা যায়, চা এবং ফ্রূটকেক একে অন্যের পরিপূরক। বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিন কিংবা যেকোনো আচার-অনুষ্ঠানে এখন সকল দেশের মানুষই কেক দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করে।
কেক শুধু উৎসব এর জন্য নয়, কেক হল এক ধরনের ঐতিহ্য। এটিকে জীবিত রাখা সমগ দেশের মানুষের কর্তব্য। বর্তমানে কেক কেটে যেকোনো অনুষ্ঠান উদ্যাপন করা শুধু ভিন দেশের সংস্কৃতিই নয়, আমাদের দেশেও এটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। স্বাস্থ্য সচেতনতার এই যুগে ফ্রূটকেকের ভূমিকা অনন্য। এর জনপ্রিয়তা এখনও উড্ডীয়মান। ফ্রূটকেক কোন একস্থানের জন্য কিংবা এক শ্রেণীর মানুষের মাঝে প্রচলিত নয়। এর প্রসার ঘটছে আর ভবিষ্যতেও ঘটবে। একসাথে এতগুলো পুষ্টিকর উপাদানে সমন্বিত খাবার আসলেই খুব কম পরিলক্ষিত হয়।