বিকেলবেলা যখন ক্ষুধার্ত পেট খাবারের জন্য শব্দ করছে এবং দুপুরের খাবার একটি দূরের স্মৃতির মতো মনে হচ্ছে তখনই অনুভব হবে নাস্তার প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি। এরূপ পরিস্থিতিতে আপনি খিটখিটে মেজাজ ছাড়াই রাতের খাবার গ্রহণের আগমুহূর্ত পর্যন্ত সময়টুকু অতিবাহিত করতে সক্ষম হবেন কিনা তা নির্ভর করছে আপনি কি ধরণের নাস্তা গ্রহণ করছেন তার উপর। আপনার রাতের খাবার গ্রহণের রুচিও নির্ভর করবে এই নাস্তা নির্বাচনের উপর। যদি আপনি কম কার্বোহাইড্রেট এবং হাই সুগারযুক্ত নাস্তা খান তাহলে আপনার এনার্জি লেভেল কমে যাবে এবং তার ফলে পরবর্তীতে আপনি অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করবেন।
গবেষণায় পাওয়া যায় যে, সাধারণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের সাথে ক্লান্তির সম্পর্ক রয়েছে। তাই মানুষের মনে যে প্রশ্নটি তৈরি হয় সেটি হলো : কোন ধরণের নাস্তা খাওয়া উচিত? হাল্কা নাস্তা নাকি ভারী নাস্তা?
সাধারণত দুইবেলার খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে নাস্তা গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ মানুষ দিনে একবার নাস্তা গ্রহণ করে থাকেন। নাস্তা খাবার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে এই দুইবেলার খাবারের মধ্যবর্তী সময়ের ক্ষুধা নিবারণ করা। অনেকক্ষেত্রে এনার্জি কমে গেলে তা বৃদ্ধির জন্য মানুষ নাস্তা গ্রহণ করে। ভোজনরসিকদের বারবার নাস্তা গ্রহণের কারণ হিসেবে কাজ করে নাস্তার মজাদার স্বাদ। কিন্তু এই নাস্তা ভারী হবে নাকি হাল্কা হবে? ভারী নাস্তা সাধারণত প্রোটিনে পূর্ণ থাকে বা এতে প্রোটিনের উপাদানের উপস্থিতি থাকে। এগুলি বেশিরভাগই তেলে ভাজা হয় এবং এর স্বাদ মানুষকে বাধ্য করে বেশি করে এসব খাবার গ্রহণ করতে।
ভারী নাস্তার মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে চিংড়ির ককটেল, চিকেন উইংস বা স্মোকড সালমন ক্যানাপেস। তুলনামূলকভাবে, হাল্কা নাস্তায় প্রোটিন বা ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাল্কা নাস্তা হয়ে থাকে ফলমূলের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন: আপেল, কলা, পেয়ারা ইত্যাদি। সবদিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, মানুষের উচিত ভারী নাস্তা পরিহার করে হাল্কা নাস্তা গ্রহণ করা। হাল্কা নাস্তা গ্রহণের ফলে একদিকে যেমন ক্ষুধা নিবারণ হয় তেমনি অপরদিকে পরবর্তী বেলার খাবারে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়।
খাবার গ্রহণের পর কয়েকঘন্টা অতিবাহিত হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যেতে শুরু করে। তখন হাল্কা নাস্তা গ্রহণে করলে তা শক্তি বৃদ্ধি করে। যদি সেই নাস্তা স্বাস্থ্যসম্মত হয় তাহলে তা দেহের জন্য বাড়তি পুষ্টির ও জোগান দেয়। যদি কোনো কারণে পরবর্তী বেলার খাবার গ্রহণ করা সম্ভব না হয় তখন এই পুষ্টি শরীরকে সচল রাখে। অসুস্থতার কারণে যদি খাবারের রুচি নষ্ট হয়ে যায় তখন হাল্কা নাস্তা গ্রহণ অনেক উপকারী হয়। নাস্তার পরিমাণ এরূপ হওয়া উচিত যেটা ক্ষুধা নিবারণের জন্য যথেষ্ট তবে এত বেশি নয় যে এটি আপনার পরবর্তী বেলার খাবারের ইচ্ছা কমিয়ে দেয় বা অনেক বেশি ক্যালরি যোগ করে। সাধারণত, যেকোনো ধরণের নাস্তায় ১৫০-২৫০ ক্যালরি থাকলেই তা যথেষ্ট বলে গণ্য করা হয়, কিন্তু ভারী নাস্তার ক্ষেত্রে ক্যালরির পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। অনেকক্ষেত্রে তা তিনগুণ বেশিও হয়ে থাকে!
এত অতিরিক্ত ক্যালরি যদি প্রতিনিয়ত গ্রহণ করা হয় তাহলে তা ওজন বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ভারী নাস্তা পরবর্তী বেলার খাবার গ্রহণের ইচ্ছা কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পূরণ হওয়া থেকে মানুষ বঞ্চিত হতে পারে। যদি নিয়মিত আল্ট্রা-প্রসেসড, হাইপারপ্যালেটেবল নাস্তা খাওয়া হয় যেসবে অতিরিক্ত লবণ, চিনি এবং চর্বি থাকে এবং যেগুলোতে ক্যালরি বেশি কিন্তু পুষ্টিগুণ কম থাকে, তাহলে এই ধরনের খাবারের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়াতে পারে। যার ফলে মানুষের খাদ্যাভ্যাস এর ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে এবং এ ধরণের অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে যাবে। এই পরিবর্তনের সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যাবে স্বাস্থ্যের উপর এবং হৃদরোগজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। তাই, এ ধরণের খাবার পরিহার করাই শ্রেয়।