ফরাসি চিজ সমাচার

by | জানু. 19, 2023 | Blog

Traditional Khichuri hobe

Without French cheese, French kitchen is incomplete

আর্ট, কালচার, সাহিত্য এবং সিটি অব লাইটস খ্যাত প্যারিস শহর ছাড়াও ফ্রান্স আরেকটি জিনিসের জন্য বিখ্যাত, সেটি হচ্ছে তার রন্ধনশালা। ফ্রান্সের গ্যাস্ট্রোনমিকাল খাবারের সুনাম পৃথিবী জুড়ে। তবে এমন একটি জিনিস রয়েছে, যা ছাড়া ফ্রান্সের রন্ধনশালা অপরিপূর্ণ বলা চলে। আর সেটি হচ্ছে চিজ আর বাংলায় পনির। 

সংক্ষেপে চিজ একটি দুগ্ধজাত খাবার এবং সমগ্র পৃথিবীতেই এর বিভিন্ন ধরণ প্রচলিত আছে। চিজ ডট কম এর কাছে পৃথিবীর মোট ১৮৩১ রকমের আসল ও এস্থেটিক চিজ রয়েছে। চিজ মূলত গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও ভেজিটেরিয়ান দুধ থেকে বিভিন্নভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। নানা রকমের নির্জাস, মশলা, ভিনেগার, সাইট্রিক এসিড ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যাবহার করা হয়ে থাকে চিজে ভিন্নতা আনার জন্য। 

ফ্রান্স পৃথিবীর অন্যতম চিজ প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক দেশ। প্রতি বছর ফ্রান্সে প্রায় বিশ লাখ টন চিজ উৎপাদন করা হয়। ফরাসিদের মধ্যে চিজের প্রতি বিশেষ দূর্বলতা রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ডেইরি ফেডারেশনের তথ্যমতে, একজন ফরাসি বছরে অন্তত ২৫ কেজি চিজ গড়ে খেয়ে থাকেন যা সারাবিশ্বে মাথাপিছুর দিক খেকে প্রথম। আর ৪৭% ফরাসি দিনে একবার হলেও চিজ মুখে পুরবেনই। 

আধুনিক ফ্রান্সের রূপকার ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্সের সর্বাধিনায়ক জেনারেল শাঁন দে গল রসিকতা করে একবার বলেছিলেন, “আপনি কীভাবে একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, যার বিভিন্ন অঞ্চলেই রয়েছে ২৪৬ রকমের চিজ?” জনাব শাঁন দে গল বেঁচে থাকলে এখন অবাক হতেন বটে, কারণ ফ্রান্সের এখন রয়েছে প্রায় ৪০০ রকমের চিজের পেটেন্ট। আর এই ৪০০ মূল ধরণের চিজের থেকে আবার পরিবর্তিত হয়ে প্রায় এক হাজার ভিন্ন রকমের সাব-ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়েছে।

ফ্রান্সে প্রায় ৪০ প্রকার চিজ রয়েছে যা আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র নিজ নিজ নির্ধারিত অ লেই উৎপাদন করতে হয়। অন্য অঞ্চলে সেই চিজ উৎপাদন নিষিদ্ধ। 

ফ্রেঞ্চরা চিজের ব্যাপারে এতই সিরিয়াস যে, তারা প্রতি দুই বছর পর পর আন্তর্জাতিক চিজ কম্পিটিশন আয়োজন করে থাকে। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিযোগিরা তাদের সেরা চিজ নিয়ে হাজির হয় এই কম্পিটিশনে। আরো জেনে অবাক হবেন যে ফ্রান্সে আপনি চিজ তৈরির উপরে ডিগ্রি নিতেও পারবেন। ফ্রান্সের ন্যাশনাল ডেইরি স্কুল প্রায় ১২০ বছর যাবৎ চিজ তৈরির উপর ডিগ্রি কোর্স পরিচালনা করে আসছে। এছাড়াও পূর্ব ফ্রান্সের হেনরি পোঁয়াকারে ইউনিভার্সিটি চিজ উৎপাদনের উপরে মাস্টার্স কোর্স পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া আরেকটি আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, ফ্রেঞ্চরা ঘোড়ার দুধ থেকেও চিজ বানিয়ে থাকে। 

একজন চিজপ্রেমী ফরাসির সামনে আপনি একটুকরো চিজ নিজের ইচ্ছেমত কেটে খেয়ে ফেললেন তো দেখবেন সে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। কারন, ফ্রান্সে চিজ কাটারও বিভিন্ন নিয়ম আছে। আছে খাওয়ার নিয়মও। কিছু চিজ ত্রিভুজ আকৃতির করে কাটতে হয়, কিছু সমান্তরাল চতুর্ভুজ আকৃতির করে, কিছু স্লাইস করে কাটতে হয়, কিছু চিজের আবার উপরের আস্তরণ কেটে শুধু ভিতরের অংশটুকই খেতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন চিজ খাওয়ার বিভিন্ন রকম সময় রয়েছে। কিছু চিজ আপনি যেকোন সময় খেতে পারবেন, কিছু চিজ ভারী খাবার খাওয়ার সময় খেতে হয়, কিছু চিজ শুধুমাত্র ওয়াইনের পাশাপাশি খেতে হয়, কিছু চিজ শুধুমাত্র বাগেতের (ফ্রান্সের বিখ্যাত রুটি) সাথে খেতে হয়। 

শেষ করছি শুরুতেই উল্লেখ করা ফরাসি রন্ধনশালায় চিজের ব্যবহার নিয়ে। ফ্রান্সে অনেক বিখ্যাত রেসিপি চিজ ছাড়া অচল। চিজ দিয়ে তৈরি কয়েকটি বিখ্যাত রেসিপি হচ্ছে ফন্দু সাভয়য়ার্দ, আলি-গ, চিজ সুফলে, তাখতিফিয়েত, রাকলেত ইত্যাদি। এসব রেসিপির কিছুতে চিজকে অন্যান্য উপাদানের সাথে রান্না করা হয়, কিছু রেসিপিতে রান্নার পরে চিজ দিয়ে উপরে গ্যাস পিস্তলের হিট দেয়া হয়, কিছুতে আবার রান্না শেষে উপরে শুধুমাত্র চিজ ছড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ফ্রান্সে যেসকল পিৎজা তৈরি হয়, তার অধিকাংশতেই ফ্রঁমাজ রাপে, ক্যাখত ফ্রঁমাজ, ব্যোফর্খ, ব্রি, এমনতালসহ নানান রকমের চিজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এককথায় ফ্রান্সকে বলা চলে চিজের স্বর্গরাজ্য।

Related Post
ফিফার জ্বর

ফিফার জ্বর

‘ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়, এটি একটি আবেগ’- কথাটি প্রতিটি বিশ্বকাপেই সত্যি হয়। ‘ফুটবল’...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!