উপমহাদেশীয় বা দেশি খাবার হিসেবে গরম সাদাভাত আর ডালের সাথে বাঙালির প্রিয় ‘ভর্তা’ স্বাদে এক নতুন মাত্রা এনে দেয়। বাংলাদেশে অসংখ্য প্রকারের জনপ্রিয় ভর্তা রয়েছে। যার প্রায় সব গুলোই সারা বাংলাদেশে স্বমাদ্রিত । আসুন কিছু সুস্বাদু ভর্তা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক-
১. টাকি মাছের ভর্তাঃ
মাছ মানেই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য, আর সাথে আছে খনিজ লবণ, ভিটামিন বি আর ডি। মাছের আরও পুষ্টিগুণ রয়েছে। টাকি মাছের ভর্তা বাঙালিদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। এটি তৈরি করা হয় রসুন, পেঁয়াজ, সরিষার তেল আর মরিচ চটকিয়ে। গরম ভাতের সাথে এর স্বাদের কথা ব্যক্ত করা খুবই কঠিন। ভাতের সাথে টাকি মাছের ভর্তা একবেলা হলেই একজন বাঙালির আর কোন আলাদা তরকারির প্রয়োজন হয় না। এর পুষ্টিগুণ যেমন রয়েছে তেমনি স্বাদও রয়েছে ব্যাপক।
২. কাঁচা টমেটো-শুটকির ভর্তাঃ
টমেটোর পুস্টিগুন সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকেই জানি। এতে আছে ভিটামিন সি, এন্টিঅক্সিডেন্টস, পটাশিয়াম আর ভিটামিন কে। কাঁচা টমেটো শুধু তরকারিতে নয়, এটি শুটকির সাথে চটকিয়ে ভর্তা করে ভাত আর ডালের সাথে দারুণ লাগে খেতে! বাঙালিরা কাঁচা টমেটো শুটকি ভর্তা খেতে খুব পছন্দ করে কারণ এর স্বাদ কিছুটা অন্যরকম।
৩. চিংড়ি ভর্তাঃ
চিংড়ি মাছ পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না বললেই চলে। সমগ্র বিশ্বে চিংড়ি মাছ খুবই সমাদৃত। চিংড়ি মাছের সাথে যেকোনো তরকারি রান্না করা যায় আর এর স্বাদ তখন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তেমনি চিংড়ি মাছের শুটকি ভর্তার স্বাদও অনন্য। বাঙালিদের ঘরে ঘরে এর চর্চা আছে। সরিষার তেল, লবণ, মরিচ, রসুন আর পেঁয়াজ চটকিয়ে এই মজাদার ভর্তা তৈরি করা সহজ। চিংড়ির পুষ্টিগুণ রয়েছে অনেক। এতে আছে প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড আর খনিজ লবণ।
৪. কালোজিরা ভর্তাঃ
কালোজিরার গুনাগুন সম্পর্কে তেমন করে কিছু বলার নেই। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে, ক্ষতিকর চর্বি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, এমনকি ক্যন্সার এর মত মরণ ব্যাধি থেকেও রক্ষা করে। কালোজিরা একটি পুষ্টিকর খাবার। এর উপকারীতা বোঝাতে অনেকে বলে থাকেন, ‘মৃত্যু ব্যতিত যেকোন রোগের ওষুধ কালোজিরা’। যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা কালোজিরার ভর্তা খেতে পছন্দ করেন। এটি কিছুটা তিত স্বাদযুক্ত তাই বাঙালিরা এর সাথে সরিষার তেল, মরিচ, রসুন দিয়ে চটকিয়ে ভর্তা করে নেয়। এরপর গরম ভাত, ডাল, সবজি ও অন্যান্য তরকারির সাথে পরিবেশন করে।
৫. কাঁঠালের বীজের সাথে শুটকি ভর্তাঃ
কাঁঠালের বীজের গুনাগুন রয়েছে অনেক। এটি আঁশযুক্ত ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার। বাঙালিরা এর সাথে চিংড়ি শুটকি চটকিয়ে ভর্তা করে খায়। এটি ঘরে ঘরে একটি অন্যতম মুখরোচক খাবার। রসুন, তেল, মরিচ, চিংড়ি শুটকি আর পেঁয়াজের সংমিশ্রণে এই মজাদার ভর্তাটি তৈরি করা হয়।
বিভিন্ন রকম মসলা আর পুষ্টিকর খাদ্য সামগ্রীর সংমিশ্রণে তৈরি হয় প্রতিটি মুখরোচক ভর্তা। ভর্তা মানেই জিভে জল! ‘ডাল ভাতের সাথে ভর্তা হলেই চলে’- এই কথাটি বাঙালিদের খাবার টেবিলের মুখ্য বাণী। সব উপাদান একসাথে চটকিয়ে কম সময়ের মধ্যেই ভর্তা-ভাতের আয়োজন এক অন্যতম পরিবেশনা।