চিজ!!! বাংলায় যাকে আমরা পনির নামে চিনি। চিজ পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম। এই পনির বা চিজ একটি দুগ্ধজাত পণ্য যা বিভিন্ন আকারের, বিভিন্ন বর্ণের ও স্বাদের হয়ে থাকে। আধিকাংশ মানুষের পছন্দের সেই পিজ্জা, বার্গার, পাস্তা অসম্পূণ থেকে যেত চিজ ছাড়া।
পৃথিবীতে শতাধিক চিজ রয়েছে, যদিও বা আমরা অল্প কিছু চিজের নাম শুনেছি ও ব্যবহার করেছি। মোজারেল্লা, পারমেশান, চেডার, সুইস চিজ এই নামগুলো বেশ জনপ্রিয় কিন্তু, লো ফ্যাট চিজ, ফ্রেশ চিজ, এইজড বা ম্যাচিউর চিজ এর সম্পর্কে আমাদের ধারণা কম। বয়স এবং স্বাদের ভিত্তিতে এসব চিজকে সারিভূক্ত করা হয়। লো ফ্যাট চিজ তৈরিতে চর্বি ছাড়া দুধ ব্যবহার করা হয়। এইজড বা ম্যাচিউর চিজ প্রস্তুত হতে সময় লাগে ৬ মাস বা তার বেশি। তবে সময় যত বেশি হয়, চিজ এর স্বাদ ও গুণগত মান তত উন্নত হয়। ফ্রেশ চিজ মূলত কম বয়স্ক চিজকে বলা হয়। এরা এইজড চিজের তুলনায় গঠনে নরম ও বেশ স্বাদের হয়ে থাকে।

জনপ্রিয় এসব চিজ ছাড়াও বেশ কিছু চিজ রয়েছে যেগুলো প্রতিনিয়ত ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু আমরা এগুলো সম্পর্কে অবগত নই। চিজ নিয়ে বিস্তারিত ধারনা থাকা জরুরি, যেহেতু আমরা অনেকেই বিভিন্ন রান্নায় এর ব্যবহার করে থাকি। সেক্ষেত্রে, আমাদের প্রিয় খাবারটি তৈরি করতে কোন চিজ ব্যবহার করতে হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পাবো।
মোজারেলা
দক্ষিণ ইতালীয় এই চিজটি সবথেকে জনপ্রিয় চিজগুলোর মধ্যে অন্যতম যা কিনা মহিষের দুধ থেকে তৈরি করা হয়। চিজটি গঠনগত দিক থেকে কিছুটা নরম ও সামান্য স্বাদ বিশিষ্ট। এইজড মোজারেলা সাধারণত কম আর্দ্র, শক্ত ও মাখন রঙের হয়। বিভিন্ন আকারের হলেও মূলত গোলাকার ও বর্গাকার গঠনের মোজারেলা বাজারে বেশি পাওয়া যায়। বাড়িতে মোজারেলা তৈরি করা বেশ কঠিন। পিজ্জা তৈরিতে চিজটি বেশি ব্যবহৃত হয়, তবে এপেটাইজার, সালাদ ও অন্যান্য অনেক খাবারেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পারমেসান
সর্বাধিক পরিচিত চিজগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো পারমেসান চিজ। অপাস্তুরিত গরুর দুধ থেকে তৈরি বাদামের স্বাদযুক্ত এই চিজ, খাবারে সামান্য পরিমাণ ব্যবহারই যথেষ্ট। সাধারণত এটা গ্রেট করে ব্যবহার করা হয় এবং আপনি এটি পিজ্জা, পাস্তা, সুপ বা যেকোনো স্ন্যাকস এর উপর ব্যবহার করে উপভোগ করতে পারেন।
চেডার
শুরুর দিকে একমাত্র ইংল্যান্ডেই চেডার চিজের উৎপাদন হত। তবে এখন বিশ্বের প্রায় অনেক দেশেই এটি প্রস্তুত করা হয়। পাস্তুরিত গরুর দুধ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। শুকনো ও খসখসে গঠনের চিজটির রঙ হাতির দাতের বর্ণ বা তার থেকে গাঢ় হলুদের সাথে তুলনা করা হয়। সময়ের সাথে সাথে চেডার চিজের গঠন আরো তীক্ষ্ণ হয়। চিজটি বার্গার এবং স্যান্ডউইচ এ বেশি ব্যবহার করা হয়।
গৌদা (ডাচ ভাষায় হৌদা)
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় চিজ। নেদারল্যান্ডের একটি শহরের নামানুসারে এই চিজের নামকরণ করা হয়েছে। গরুর দুধ থেকে তৈরিকৃত এই চিজ সামান্য স্বাদযুক্ত, শক্ত গঠনের হয় কিন্তু সময়ের সাথে এর গঠন ও স্বাদ উভয়ই পরিবর্তন হয়। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের পানীয় এর সাথে চিজটি উপভোগ করা হয়। চা এমনকি বিভিন্ন ফলের রসের সাথেও খাওয়া যায়।
ইমেন্টলার
ইমেন্টলার ও সুইস চিজকে অনেকেই একই চিজ ভেবে ভুল করে থাকেন, যেহেতু এরা দেখতে কিছুটা এক ধরনের। তবে ইমেন্টলার চিজ, সুইস চিজের তুলনায় বেশি স্বাদযুক্ত। এর মিষ্টি ও ফ্রুটি স্বাদ ও গন্ধ সহজেই খাবারের সাথে মানিয়ে যায়। তাই প্রায় অনেক খাবারে এমনকি পানীয়ের সাথে পরিবেশন করা যায়।
ব্রী
ব্রী একটি বিখ্যাত ফরাসি চিজ যা “কুইন অফ চিজ” নামে পরিচিত। নরম গঠনের এই চিজটি বাদামের ঘ্রাণযুক্ত, তবে কখনো কখনো মাশরুমের মত ঘ্রাণ পাওয়া যায়। এর স্বাদ সম্পূর্ণভাবে এর উপাদানের উপর নির্ভর করে। উৎপাদনের সময় ব্যবহৃত উপাদানসমূহের ভিন্নতার সাথে এর স্বাদেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত ব্রী ডেজার্ট চিজ হিসেবেই বেশি খ্যাত কিন্তু এটি মাংসেও ব্যবহার করা যায়।
ফেটা
ফেটা পনির তৈরিতে ছাগল বা ভেড়ার দুধ ব্যবহার করা হয়। চিজের বয়স ও উৎপাদন অঞ্চল অনুযায়ী গঠনগত ভিন্নতা দেখা যায় নোনতা স্বাদযুক্ত এই চিজের। নোনতা ও তীক্ষ্ণ স্বাদ কিছুটা দূর করতে চিজটি পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করা উত্তম। জলপাই তেল, ভাজা মরিচ ও বাদামের সাথে ফেটা চিজ মিশিয়ে অসাধারণ সুস্বাদু খাবার হিসেবে উপভোগ করা যায়। এছাড়াও ম্যাক্সিকান খাবার, সালাদ, পিজ্জা ও অন্যান্য খাবারেও ব্যবহার করতে পারেন।
এডাম
এডাম চিজের আকর্ষণীয় গঠন সহজেই যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করে। প্রথমে দেখলে মনে হয়, ফ্যাকাশে হলুদ রঙের চিজকে একটি লাল আস্তরণ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আসলে এই লাল আস্তরটি প্যারাফিন মোমের আবরণ। পাস্তা, সালাদ, স্যুপ, চিকেন ও অন্যান্য ডিশের সাথে এডাম চিজ ব্যবহার করা হয়।
রোকফোর্ট
ব্লু চিজের মধ্যে অন্যতম হলো রোকফোর্ট। ভেড়ার দুধ দিয়ে তৈরি এই চিজের তীক্ষè মিষ্টি স্বাদ নির্ভর করে তার বয়সের উপর। এর বিশেষ একধরনের স্বাদ রয়েছে এবং এর গলন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় সব ধরনের খাবারেই ব্যবহারযোগ্য। রোকফোর্ট বেশিরভাগই টপিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে সালাদ টপিং ও ড্রেসিং এ।
মাসকারপোন
বাটারী ও ক্রিমযুক্ত মাসকারপোন একটি ইতালীয় চিজ যা তৈরি করা হয় পাস্তুরিত গরুর দুধ দিয়ে। জনপ্রিয় ইতালীয় ডেজার্ট তিরামিসু এবং বেশকিছু চিজকেক তৈরিতেও মাসকারপোন চিজটি ব্যবহার করা হয়। এর ব্যবহার খাবারের মূল স্বাদের পরিবর্তন না করে বরং স্বাদ বাড়াতে ভূমিকা রাখে। এই চিজ ক্রিমি ডেজার্ট, পাস্তা, লাসাগনা ও পুডিং এ ব্যবহার করা যায়।

একজন সুস্থ ব্যক্তির কমপক্ষে ১০০০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। চিজ ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। আমাদের চিজের উপকারিতা সম্পর্কে বিবেচনা করা উচিত কারণ এটি আমাদের শরীরের গঠনে ও শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। দাঁত ও হাড়ের বিকাশে, রক্তচাপ কমাতে, রক্তনালির সুস্থতা বজার রাখতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে চিজের ভূমিকা অন্যতম। তবে অতিরিক্ত চিজ স্বা¯ে’্যর জন্য ক্ষতিকর। কারণ, অতিরিক্ত চর্বি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এসব ঝুঁকি এড়ানোর জন্য অবশ্যই আমাদের কম চর্বিযুক্ত চিজ বেছে নিতে হবে।