ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ প্রাতঃরাশের উৎপত্তি ব্রিটিশ ভদ্রলোকদের দ্বারা। ভদ্র শ্রেণীর মানুষ বা সমাজ ছিল আভিজাত সম্পন্ন যেমন জমির মালিক বা পুরোহিতের প্রবীণ সদস্যগণ। ভদ্র লোকেরা সকালের নাস্তাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার হিসাবে বিবেচনা করে যেই বার্তাটি এখনো প্রচলিত আছে। অতঃপর ভিক্টোরিয়ানদের যুগে ব্রিটিশ প্রাতঃরাশের ঐতিহ্যকে একটি শিল্পের রূপ দেওয়া হয়েছিল। তারপরে এডওয়ার্ডিয়ানরা নির্দিষ্ট উপাদান নিয়ে এসেছিল যা ব্রিটিশ প্রাতঃরাশের অন্তর্ভুক্ত ছিল যা ব্রিটিশ রন্ধনসম্পর্কীয় সংস্কৃতির একটি আইকনকে নির্দেশ করে। ব্রিটিশ প্রাতঃরাশ হল এমন একটি অংশ যা গর্বের সাথে কয়েক শতাব্দী ধরে সে সমাজে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অব্যাহত রয়েছে।
ব্রিটিশ প্রাতঃরাশের মধ্যে রয়েছে বেকন, ভাজা ডিম এবং সসেজ, গ্রিলড টমেটো, মাশরুম, বেকড বিনস, টোস্ট এবং এক টুকরো কালো পুডিং (ব্লাডওয়ার্স্টের মতো)।যেটা চা বা কফির সাথে যায়। ব্রিটিশ প্রাতরাশের খাদ্য উপাদান গুলোকে ভেজে প্রস্তুত করা হয়। এই কারণে, ব্রিটিশ প্রাতঃরাশ ‘ফ্রাই-আপ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ প্রাতঃরাশের অনেক বৈচিত্র রয়েছে। যেমন, ঐতিহ্যবাহী কার্নিশ প্রাতঃরাশ যা কার্নিশ হগের পুডিংয়ের সাথে পরিবেশন করা হয়। ওয়েলশরা লেভারপাউরুটি বা লেভার কেক খায় যা সামুদ্রিক শৈবালের কাই থেকে তৈরি। আইরিশরা তাদের প্রাতঃরাশে সোডা রুটি অন্তর্ভুক্ত করে, স্কটিশরা ট্যাটি স্কোন খেতে পছন্দ করে যাকে আলুর স্কোন , ওটকেক এবং হ্যাগিস ও বলা হয়। সম্ভবত এ কারণেই ব্রিটিশ প্রাতঃরাশ এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি ব্রিটেনের সর্বত্র হোটেল, ক্যাফে, পাব, রেস্তোরাঁ, বিএন্ডবিতে পরিবেশন করা হয়।
ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ প্রাতঃরাশ সামাজিক এবং পারিবারিক সম্মেলনে উপভোগ করা হয়। ব্রিটিশ প্রাতঃরাশ একটি জাতীয় খাবার, তাছাড়া ব্রিটিশ সংস্কৃতির অংশ যা ভালবাসার সাথে পরিবেশন করা হয়।
বাংলাদেশের প্রাতঃরাশ আঞ্চলিক বৈচিত্র্য এবং জলবায়ুর ইতিহাস দ্বারা রূপ নিয়েছে। বাঙালি প্রাতঃরাশ মূলত ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মুঘল আমল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। বাঙালির সকালের প্রাতঃরাশ ও তার দেশের ছয়টি ঋতু দ্বারা প্রভাবিত। বিভিন্ন ধরণের খাবার সাধারণত বিভিন্ন ঋতুতে খাওয়া হয়। এক কথায় বাংলাদেশী প্রাতঃরাশ এর প্লেট হল মশলা, ঋতু এবং উৎসর সম্পূর্ণ ছবি।
মুঘল আমলে লোকেরা সকালের নাস্তা হিসেবে মাংসের মিষ্টি কোরমা বা মাছের তরকারি, কাবাব এবং বাকরখানি খেত। এই বাকরখানির উৎপত্তিস্থল আফগানিস্তান। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশিরা তাদের সকালের নাস্তা ও বিকালের নাস্তার তালিকাতে বাকরখানি খেতে পছন্দ করে।
বাংলাদেশি প্রাতঃরাশ জেলা থেকে জেলায় সামান্য পার্থক্য হয়ে থাকে। বাংলাদেশী প্রাতঃরাশে প্রধানত রুটি অথবা পরোটা যা ভাজা ডিম দিয়ে পরিবেশন করা হয় যা অমলেট নামে পরিচিত বা ডালভাজি যা মিশ্র ডালসবজি নামে পরিচিত বা মুরগির দোপিয়াজার সাথে খাওয়া হয়। এছাড়াও বাংলাদেশী রেস্তোরাঁগুলো তাদের প্রাতঃরাশের তালিকাতে নিহারির সাথে নান রুটি রাখে। প্রাতঃরাশের সাথে চা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পানীয়।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে গ্রীষ্মের মৌসুমে পান্তা ভাত খাওয়া হয় প্রাতঃরাশ এর খাবার হিসেবে যা অবশিষ্ট ভাতকে পানিতে ভিজিয়ে তৈরি করা হয়। বর্ষাকালে লোকেরা তাদের সকালের প্রাতঃরাশ এ ভুনা খিচুড়ির সাথে গরুর মাংস বা মুরগির মাংসের তরকারি বা ইলিশ মাছের ভাজা সাথে বিভিন্ন ধরনের আচার খেতে পছন্দ করে। শীত মৌসুমে বাংলাদেশিরা তাদের সকালের নাস্তায় পিঠা-পুলি খেতে পছন্দ করে। পিঠা তৈরি করা হয় চালের গুঁড়ার সাথে খেজুরের গুড় অথবা খেজুরের রসের সাথে নারকেল এবং দুধের মিশ্রণে। কিছু সাধারণ পিঠা হল ভাপা পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, নকশি পিঠা, পুলি পিঠা ইত্যাদি।
ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব এখনও বাঙালির সকালের প্রাতঃরাশ এ দেখা যায়, যেমন পাঁচতারকা হোটেল এবং অভিজাতরা টোস্ট, পাউরুটি, জেলি , মাখন ইত্যাদি খেতে পছন্দ করে। স্বাস্থ্য সচেতন লোকেরা তাদের সকালের নাস্তায় সেরাল খেতে পছন্দ করে। এক কথায় বাংলাদেশীরা সকালের প্রাতঃরাশ এ ভারী কার্বোহাইড্রেট খাবার খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে যা দীর্ঘ সময়ের জন্য যে কারও ক্ষুধা মেটাতে যথেষ্ট।