জাপান ভ্রমণে যদি যান তাহলে আপনার প্রায়শই মনে হতে পারে অদ্ভুত কিছু দৃষ্টি চেয়ে আছে আপনার দিকে। রেস্তোরাঁ বা বারগুলোতে এই অনুভূতি হবার সম্ভবনা প্রবল। যদি অজানা জিনিসের প্রতি আপনার আগ্রহ একটু বেশি থাকে তাহলে এই চাহনি পেয়ে যাবেন আপনার খাবারের প্লেটে। কি হলো? অবাক হচ্ছেন? অবাক হবার কিছু নেই। আমি যে চাহনির কথা বলছি তা হলো জাপানের প্রসিদ্ধ একটি খাদ্য, টুনা মাছের চোখ। জাপান ছাড়াও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই খাদ্যের প্ৰচলন রয়েছে।
অদ্ভূতুড়ে খাদ্য হলেও এর ইতিহাস অন্যান্য অদ্ভূতুড়ে খাদ্যের চেয়ে কিছুটা আলাদা। টুনার চোখ প্রাচীন কোনো খাদ্য নয়, এর প্রচলন হয়েছে ৯০ এর দশকে। এই খাদ্যের উৎপত্তি অভাবের তাড়নায় হয় নি, বরং মানুষের কৌতুহল থেকে হয়েছে। পূর্বে মানুষ টুনা মাছের চোখ উচ্ছিষ্ট অংশ হিসেবে ফেলে দিলেও, এখন তা একটি জনপ্রিয় খাদ্যে পরিণত হয়েছে। টুনামাছের চোখ নানা উপায়ে খাওয়া হয়ে থাকে: রান্না করে, ভেজে, স্টু হিসেবে বা হাল্কা ভাপে রান্না করে। জাপানিজ শেফরা এই টেনিস বলের সাইজের মাংসল চোখ পরিবেশন করে থাকে এপেটাইজার বা বার স্ন্যাকস হিসেবে।
টুনামাছের চোখের স্ক্লেরা অংশটি সাধারণত খাওয়া হয় না এর চর্বণযোগ্য দৃঢ় গঠনের জন্য। চোখের ভেতরের বাকি অংশ যা বোন মেরোর সাথে যুক্ত থাকে, তা রান্না করলে নরম এবং খাবারযোগ্য হয়। খাবার হিসেবে টুনামাছের চোখ নানা উপায়ে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিটি হলো গরম পানিতে সিদ্ধ করে একে সিজনিং করা সয়া সস, চিনি এবং মিরিন দিয়ে। এই মিরিন হলো অনেকটা রাইস ওয়াইনের মতো যা খাবারের স্বাদে আলাদা একটি মাত্রা যুক্ত করে। এছাড়াও টুনামাছের চোখ খাওয়া হয়ে থাকে রাইস ভিনেগার, লেবু এবং আদা দিয়ে।
ভোজনরসিকদের মতে এর স্বাদ অনেকটা ব্ল্যান্ড। তারা এর স্বাদকে তুলনা করেছেন স্কুইড, ঝিনুক বা শক্ত সিদ্ধ ডিমের সাথে। রান্না করা টুনা মাছের চোখ একটি বা দুটি করে পরিবেশন করা হয়ে থাকে অন্যান্য খাবারের সাথে।
প্রায়শই লোকজন এটি খেয়ে থাকে “টুনাস টিয়ার্স” নামের এক ধরনের পানীয় এর সঙ্গে তা তৈরি হয় সোজু এবং কাঁচা টুনার লেন্স দিয়ে। এতে অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। টুনার চোখে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড রয়েছে। টুনার চোখ খাবার উপকারিতা অনেক। হার্টজনিত বিভিন্ন সমস্যা এবং অ্যারিথমিয়াস প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সম্পর্কিত উন্নতি করে। এছাড়াও শরীরে ভালো কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে খারাপ কোলেস্টেরল এর তুলনায়। শক্তি বৃদ্ধিতে, দৃঢ় হাড় গঠনে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে এর ভূমিকা রয়েছে।