টিভির পর্দায় কেঁচো দেখে আমাদের শরীর শিরশির করে ওঠে। তাহলে ভেবে দেখুন, খাওয়ার প্লেটে যদি কেঁচো থাকে তবে কেমন লাগবে? আমি আপনি নিশ্চয়ই এটা ভাবতেই পারছিনা। আমাদের কাছে খারাপ লাগলেও, পৃথিবীতে এমন জাতি আছে যাদের কাছে এটি বেশ সুস্বাদু খাবার।
অনেক জায়গায় সামুদ্রিক কীট একটি উপাদেয় খাদ্য। সবচেয়ে সাধারণ হল পালোলো ভিরদিস। এটি পানির নিচের একধরনের কীট যা ওয়ার্ম, ওয়া ও বা নিয়ালে নামেও পরিচিত। সামোয়াতে পাওয়া যায় বলে এটি সামোয়ান পালোলো ওয়ার্ম নামেও পরিচিত।
ওয়ার্ম প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপের আশেপাশে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অ লে পাওয়া যায়। সামোয়ার পাশাপাশি এটি ইন্দোনেশিয়া, ভানুয়াতু এবং ফিলিপাইনের কিছু দ্বীপে দেখতে পাওয়া যায়। তারা অগভীর পানিতে প্রবাল ধ্বংসস্তূপে আশ্রয় নেয়। পুরুষ ওয়ার্ম লালচে-বাদামী এবং স্ত্রী ওয়ার্ম নীলাভ-সবুজ বর্ণের হতে পারে। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে, ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপে, সামুদ্রিক কীট ধরার জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি বাউ নাইলে নামে পরিচিত, যার অনুবাদ ‘সমুদ্রের কীট ধরা’।
সামোয়াতে, অক্টোবরের প্রথম পূর্ণিমার সাত দিন পর, কীট শিকার শুরু হয়। লোকেরা তাদের জাল, বালতি, কখনও কখনও খালি হাতেও এসব কীট শিকার করে এবং লম্বা, স্প্যাগেটির মতো কীট শিকার করে নিয়ে আসে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এদের শিকার করা হয়। তারা তাদের পরিবার এবং আত্মীয়দের সাথে ভোজ ভাগ করে নেয়, কারণ এটি তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। তাদের উদ্যাপনের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মাধ্যমে নিজেদের আত্মীয়, বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক আরো উন্নত হয়।
এই ধরনের কীটগুলো এখনো কমার্শিয়ালী বিক্রি শুরু হয়নি। খাদ্য হিসেবে এই কীটের ব্যবহার এখনো বহুল আলোচিত বা জনপ্রিয় নয়। তবে তারা নিজেদের মধ্যে, এমনকি আশে পাশের মানুষের কাছে বিক্রি করে। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে তারা এগুলো বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছে। এক কেজি কীটের দাম প্রায় ১০০ ডলার।
একটি মজার তথ্য হল যে, খাবারে মাথাটি অনুপস্থিত। কারণ, এই কীট তাদের নিম্ন অর্ধেক বিচ্ছিন্ন করার বিরল ক্ষমতা রাখে। প্রতিটি সঙ্গমের মৌসুমে কীটগুলো পৃষ্ঠে ভাসার জন্য এবং ডিম বা শুক্রাণুমুক্ত করার জন্য এটি করে। সুতরাং, যখন মানুষ ‘লেজের অংশ’ সংগ্রহ করে, মাথার অংশ তখন সমুদ্রের জলের নীচে অজ্ঞতায় বাস করে। এই কারনেই এদের সংখ্যা কখনো কমে যায় না। যেহেতু নিচের অংশ আবার কিছুদিনের মধ্যে পরিপূর্ণতা পায় তাই এরা সংখ্যায় আগের মতই থাকে। প্রকৃতির কোনো রকম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় না, এবং মানুষও বেশ অল্প খরচে পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। সঠিক প্রচার ও বাজারজাতকরণ হলে, এই প্রাকৃতিক খাদ্য বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম।
ভোক্তারা এর স্বাদকে অ্যাবালোন, ঝিনুক এবং ঝিনুকের সংমিশ্রণ হিসেবে বর্ণনা করে। কেউ কেউ এগুলো কাঁচা খেতে পছন্দ করেন। যাইহোক, বেশিরভাগ সময় মাখন এবং পেঁয়াজ দিয়ে ভাজার পরে কলার চিপস্ এবং কচু দিয়ে পরিবেশন করা হয়।