পৃথিবীতে যেমন বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতি রয়েছে তেমন রয়েছে বিভিন্ন ধরণের খাবার। এদের মধ্যে কানাডার জেলিড মুজ নাক রন্ধন বিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছে উদ্ভট খাবার হিসাবে। এখন প্রশ্ন জাগবে মনে, কেন এই খাবারকে এমন উদ্ভট উপাধি দেওয়া হয়েছে এবং এই খাবারের মধ্যে কি এমন আছে যে মানুষ একে অদ্ভুত তালিকায় রাখে।
এখানে জেনে রাখা দরকার যে মুজ হলো এক ধরণের হরিণ যার আর একটি নাম হলো আমেরিকান হরিণ।
জেলিড মুজ নাকের ইতিহাস
১৮৩০ সালের দিকে কানাডার উত্তর অঞ্চলের আদিবাসীরা খাবারের জন্য মুজ শিকার করতো এবং শিকার করা মুজের প্রতিটি অংশ খাবার হিসাবে খেত। এটি এমন সময় ছিল যখন পরিবারের সবাই নির্ভর করতো শুধু মাত্র তাদের পরিবারে থাকা শিকারীর উপর। এর জন্য ঐসব শিকারীর স্ত্রীরা খাবার রান্নার সময়ে শিকার করা পশুর কোনো অংশ অপচয় করতো না।
এখানে জেনে রাখা ভালো যে কোনো স্থানের খাবার সেই এস্থানের জলবায়ু এবং আবহাওয়ার উপর অনেকটা নির্ভরশীল। যেহেতু কানাডার উত্তর অঞ্চলের আবহাওয়া অত্যন্ত ঠান্ডা এবং এখানে গ্রীষ্মকাল মাত্র দুই মাসেরও কম সময় ধরে থাকে সেহেতু এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা খুবই কষ্ট দায়ক। এর জন্য এইসব অঞ্চলের মানুষ চেষ্ঠা করে কোনো মতে যেন তাদের কষ্ট করে শিকার করা খাবার যেনো কোনো ভাবে অপচয় অথবা নষ্ট না হয়।
এর ফলে দেখা যায় যে উত্তর অঞ্চলের মানুষরা খাবারের অপচয় রোধ করার জন্য খাবার নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে এবং এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিয়ে আসে জেলিড মুজ নাক। ১৯৬৭ সালে কানাডিয়ান সরকারের একটি প্রকাশনী এই খাবারটি নর্থারন কুকবুকে অন্তর্ভুক্ত করে।
জেলিড মুজ নাকের রেসিপি
মুজের নাকে প্রচুর পরিমাণে তরুণাস্থি থাকায় জেলিড মুজের নাক তৈরিতে কোনো প্রকার কৃত্রিম জেলটিন ব্যবহার করা হয় না। অতএব নিম্নে জেলিড মুজ নাক তৈরির পদক্ষেপগুলি দেওয়া হলো:
* রান্নার আগে মুজ নাকের ভেতরের এবং বাহিরের লোম সাবধানে তুলে ফেলতে হবে।
* এরপর একটি পটে পানি নিয়ে তাতে নাকটি রান্না করতে কবে যতক্ষণনা নাকটি সিদ্ধ হয়
* পটের পানিতে পেঁয়াজ, রসুন, বিভিন্ন মশলা এবং ভিনেগার দিতে হবে টেস্টের জন্য
* তারপর সারারাত এটা ঠাণ্ডা করতে হবে এবং পরের দিন নাকটি থেকে হাড় বাদ দিয়ে মাংসগুলো আলাদা করে নিতে হবে
* এরপর ঝোল অথবা সূপ যেটার মধ্যে নাকটি রান্না করা হয়েছে সেটি আবার গরম করে মাংসের টুকরোগুলোর ওপর ঢেলে দিতে হবে
* অবশেষে এটিকে ঠাণ্ডা হতে দিতে হবে যাতে জেলি সেট হয়ে যায় এবং তারপরে স্লাইস করে ঠান্ডা অবস্থায় পরিবেশন করতে হবে
জেলিড মুজ নাকের স্বাদ
এটা বলা হয় যে জেলিড মুজ নাকের স্বাদ প্রায় গরুর মাংসের স্টু বা কর্নড গরুর মাংসের স্বাদের মতো। জেলোর ভিতরে যে নাকের মাংসের টুকরোগুলো থাকে সেগুলা প্রচুর সুস্বাধু হয় এবং মাংসগুলোর টেক্সচার কোমল এবং নমনীয় হয়ে থাকে। অন্য দিকে জেলোটির স্বাদ হয় সলিডিফাইড সূপ এর মত।
জেলিড মুজ নাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা
জেলিড মুজ নাকের কোন উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা নেই। কিন্তু এই খাবারটিতে আছে কম ক্যালোরি। এছাড়া এটি চর্বি-মুক্ত, স্যাচুরেটেড ফ্যাট-মুক্ত এবং কোলেস্টেরল-মুক্ত।
পরিশেষে বলা যায় যে জেলিড মুজ নাক হলো একটি কানাডিয়ান কুইসিন। বিশেষ করে উত্তর কানাডিয়ান অঞ্চলে এটি একটি সুস্বাদু খাবার। কিন্তু এর বল ব্যতিক্রমতার জন্য এটি বিশ্বের চোখে উদ্ভট খাদ্য হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। তবুও বিশ্বের সকল দুঃসাহসিক লোকেদের জন্য এই উদ্ভট খাবারটি দিতে পারে তাদেরকে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ এবং নতুন অভিজ্ঞতা।