‘সেঞ্চুরি এগ’ নামটি আমাদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি করে। কি এই সে ুরি এগ? ডাক বা গোল্ডেন ডাকের মতো এটিও কি ক্রিকেটে ব্যবহার হওয়া আরেকটি বিশেষ টার্ম? নাকি এক হালি, এক ডজন এর মতো আরেকটি শব্দ যেটি বোঝায় একশত ডিমকে? না, এর কোনোটিই সঠিক উত্তর নয়। সেঞ্চুরি এগ হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের চাইনিজ ডিমের ধরন। এই নামকরণের পেছনের কারণ হছে এই ডিমগুলো বিশেষ পদ্ধতিতে লম্বা সময় ধরে সংরক্ষণ করা হয়। এই সেঞ্চুরি এগ এর আরও কিছু নাম রয়েছে: হানড্রেড ইয়ার্স এগ, মিলেনিয়াম এগ, থাউজেন্ড ইয়ার্স এগ। নামের সাথে শতবর্ষ, হাজারবর্ষ থাকলেও এত বছর ধরে এই ডিম সংরক্ষণ করা হয় না। হতে পারে এটি আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এই বিশেষ নামটি দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে এই ডিম কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
চায়নাতে আরও একটি আকর্ষণীয় নাম প্রচলিত আছে এই ডিমের। ডিমের গায়ে জটিল এক ধরনের নকশা লক্ষ করা যায় যা দেখতে অনেকটা কাঠের মতো, যার কারণে অনেকে ‘পাইন প্যাটার্নড এগ’ বলে থাকে। অনেকের ধারণা এই ডিম সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে ঘোড়ার মূত্রে ভিজিয়ে যদিও এই তত্ত্বের কোনো সঠিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এই ভ্রান্ত ধারণাটি থেকে থাইল্যান্ড এবং লাওসে একে ডাকা হয় ‘ঘোড়ার মূত্রের ডিম’ নামে। তাই অনেক মানুষই এই ডিম থেকে বিরত থাকেন।
সাধারণত মুরগি, হাঁস এবং কোয়েলের ডিম এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে চাইনিজ বিভিন্ন খাবার প্রচলনের ক্ষেত্রে। মানে! এতক্ষণ কি খাবার ডিমের কথা বলা হচ্ছে? আপনি ঠিকই ধরেছেন, সেঞ্চুরি এগ পৃথিবীর সব অদ্ভুত খাবারগুলোর মধ্যে একটি এবং এটির প্রচলন সবচেয়ে বেশি চায়নাতে। সাধারণত সেঞ্চুরি এগ সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে মাটি, ছাই, কলিচুন বা ধানের গুঁড়োর মিশ্রনের মধ্যে এবং পরবর্তীতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন খাবার তৈরীতে।
এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে ডিমের কুসুম গাঢ় সবুজ থেকে ধূসর রঙের হয়ে যায়। হাইড্রোজেন সালফাইড এবং এমোনিয়ার উপস্থিতির কারণে একটি কড়া গন্ধও হয়ে থাকে এই ডিমে। ডিমের সাদা অংশটি গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করে এবং নোনতা স্বাদযুক্ত স্বচ্ছ জেলিতে পরিণত হয়। এই পরিবর্তনের পিছনে প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে ক্ষারীয় লবণ। পরিবর্তন চলাকালে ডিমের পিএইচ ক্রমান্বয়ে ৯ থেকে ১২ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তৈরি হয় অপ্রীতিকর গন্ধ যার ফলে মনে হয় ডিমের স্বাদও খারাপ হবে। কিন্ত আশ্চর্যজনকভাবে তা খেতে অনেক রসালো এবং ক্রিমি হয়ে থাকে। সেঞ্চুরি এগ নানাভাবে খাওয়া যায়। সকালের নাস্তা, দুপরের খাবার, রাতের খাবার সবখানেই এর উপস্থিত লক্ষণীয়। নাস্তা, এপেটাইজার বা প্রধান খাবার সবভাবেই খাওয়া হয়ে থাকে সেঞ্চুরি এগ। সাধারণত এই ডিমের সাথে খাওয়া হয় মাংস, আদা, টোফু, ওয়াইন এবং শ্যাম্পেন। পেস্ট্রি বেক করতেও এই ডিম ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সেঞ্চুরি এগ সংরক্ষণের এই পদ্ধতি আবিষ্কৃত হুনান প্রদেশে। ধারণা করা হয় এক ব্যক্তি কিছু পরিত্যক্ত হাসের ডিম লেকে পাওয়ার পর তা খাবার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকে শুরু হয় এই পদ্ধতিতে ডিম সংরক্ষণ করে খাওয়া। যদিও এর উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত কোর তথ্য পাওয়া যায়নি তবে গবেষকদের ধারণা যে পাঁচশত বছর পূর্বে মিং সাম্রাজ্যে এই পদ্ধতি প্রথম চালু হয়। শত শত বছর পরেও প্রচলিত এই পদ্ধতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধুমাত্র ফ্যাক্টরিতে বড় পর্যায়ে উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্য পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়।
সেঞ্চুরি এগ খাবার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকে অনেকেই। তবে প্রচলিত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হলে এই ডিম খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু অনিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায় যা অবাঞ্ছিত। যদিও এই খাদ্যটি বিশ্বব্যাপী তেমন প্রচলিত নয়, চীন এবং এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এটি অনেক বিখ্যাত। যাদের এই খাবারটি পছন্দ তাদের আশা এর স্বাদ ছড়িয়ে যাবে পুরো বিশ্বে।