‘ব্যাচেলর’ শব্দটি শুনলে প্রথমে কোন চিত্রটি ভেসে ওঠে আপনার মনে? একজন একা মানুষ যে তার পরিবারের সাথে থাকেন না? নাকি এমন কেউ যিনি স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভোগেন? আমার চোখে ব্যাচেলর মানেই এমন একজন যে জীবন এবং কাজের ভেতর সমঝোতা করতে গিয়ে নিজের যত্ন নিতে এবং ঠিকমতো খেতেই ভুলে যান।
ব্যাচেলর থাকার সময়টা আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই যেমন স্মরণীয় ঠিক তেমনি গুরুত্বপূর্ণও বটে। এই সময় মানুষ সবেমাত্র জীবনের ও নিজের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে শেখে। সেইসাথে অনেক আনন্দঘন মুহূর্তও ঘটে। নতুন দায়িত্ব ও ক্যারিয়ার সামলাতে গিয়ে আমরা প্রায়ই খেতে ভুলে যাই বা সময় সঙ্কটের কারণে যা ইচ্ছে তাই খেয়ে ফেলি। বেশিরভাগ ব্যাচেলররা একা বা মেসে থাকেন; রান্না করতে জানেন না, অনেক ক্ষেত্রে হয়তো সময়টাই পান না পেটপুরে খাওয়ার মতো। তাই না চাইতেও তাদেরকে নির্ভর করতে হয় অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া অস্থায়ী রাঁধুনীর ওপর। যাদের রান্না কখনও কখনও অস্বাস্থ্যকর উপায়েও হয়ে থাকে। ‘মেসের রান্না খেয়ে আলসার হয়ে গেছে’- এমন কথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। আবার তাদেরকে পকেটের দিকটাও তো খেয়াল রাখতে হয়।
এই অবস্থায় ব্যাচেলরদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় সিঙ্গারা, সমুচা, পাউরুটি, কলা, বাটারবান ইত্যাদি সহজলভ্য ও কম খরচের স্ট্রিটফুড। এধরণের খাবার প্রতিদিন খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়। সিঙ্গারা, সমুচা, অন্যান্য ভাঁজাপোড়া খাবারগুলো সাধারণত পুরনো পোড়া তেলে ভাজা হয়। যার ফলে গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে প্রত্যেকটা সমস্যারই সমাধান রয়েছে। চলুন ব্যাচেলরদের জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর এবং সাশ্রয়ী খাবার দেখে নিই।
পাস্তা, নুডলস, স্প্যাগেটি ইত্যাদি অনেক ব্যাচেলরেরই প্রথম পছন্দ হতে পারে। কারণ, এগুলো যেমন সাশ্রয়ী তেমনি তৈরি করতেও সময় কম লাগে। মাত্র কয়েক মিনিটেই তৈরি করা সম্ভব। এর সাথে সবজি, মাংস, ডিম ইত্যাদি মিশিয়ে আরও সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর করা সম্ভব। আরেকটি সহজ খাবার হতে পারে মাখন দিয়ে টোস্ট। যেদিন অফিস যাবার তাড়া থাকবে বা সময়স্বল্পতা থাকবে সেদিন পাউরুটি বা টোস্টের সাথে মাখন বা জেলি বেশ জমে যাবে।
রাতের খাবার বা দুপুরে খাবার হিসেবে মুরগির তরকারির চেয়ে সহজ এবং কষ্টহীন কিছু হতে পারে না। আর তাই বেশিরভাগ ব্যাচেলরদের প্রধান খাবারই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুরগি। তবে, ইদানিং এই মুরগিতে পাওয়া যাচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অনেক উপাদান। একটু সচেতনতার সাথে মুরগি বাছায় করাটা হবে তাই বুদ্ধিমানের মত কাজ। আজকাল ভেজালের ভীড়ে অনেক অর্গানিক খাবারের ব্যবসায়ীরা ভেজালমুক্ত হাস, মুরগি বা কবুতর বিক্রি করে থাকে। চটজলদি পুষ্টিকর খাবার হিসেবে এই খাবারগুলো হতে পারে সঠিক সমাধান। ওট্স ব্যাচেলরদের খাবারের তালিকায় হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। ওট্সে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট এবং বিপুল পরিমাণে ক্যালরি। সাধারণত দুধ, কলা এবং মধুর সাথে ওট্স খাওয়া হয়ে থাকে। তবে অন্যান্য ফলও যোগ করা যেতে পারে পুষ্টিগুণ ও স্বাদের কথা মাথায় রেখে। জলখাবার হিসেবে স্যান্ডউইচ, অমলেট, প্যানকেক ইত্যাদি ভালো বিকল্প হতে পারে।
আরও সাশ্রয়ীভাবে খাবার টেবিল পরিচালনার জন্য একজন ব্যাচেলর চতুরতার সাথে কেনাকাটা করতে পারেন। যেমন, মাছ মাংসের পরিবর্তে প্রোটিনের জন্য ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা, শিমের বিচি ইত্যাদি কিনতে পারেন। মৌসুমি ফল ও সবজি কিনে ফ্রিজে রেখে দীর্ঘদিন খাওয়া যেতে পারে। সারাবছর যেসব খাবার সংরক্ষণ করা যায় তার প্রতি নজর দেয়া যেতে পারে। এতে করে খরচ অনেকটা কমে আসে।
দৈনিক আরও সময় বাঁচানোর জন্য সাপ্তাহিক খাবার পরিকল্পনা করে রাখাটা বেশ ভালো উপায়। পুরো সপ্তাহের ৩ বেলার খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় এবং পরিমাণমত সবজি, মাছ, মাংস, রুটি এবং অন্যান্য বাজার-সদাই একদিনে করে ফেললে বারবার কেনাকাটার ঝামেলা থাকে না এবং রান্না করার সময়ও সব হাতের নাগালে পাওয়া যায়। এই অভ্যাসটি একজন ব্যাচেলরের সময় বাঁচাতে এবং পেটপুরে খাওয়ার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারে। পরিশেষে বলা যায়, ব্যাচেলর জীবনটা মানুষের জীবনে স্থায়ী নয়। তাই খাবারদাবারের ঝক্কি-ঝামেলা যতটা গুছিয়ে নেওয়া যায় ঠিক ততটাই আনন্দময় করে তোলা যায় এই সময়টাকে।