Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-wp-security-and-firewall domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /var/www/wp-includes/functions.php on line 6114
পিঠাকথন | The Diniverse

পিঠাকথন

by | জানু. 18, 2023 | Editor's Pick, Traditional Food

Traditional Khichuri hobe

In Bangladesh, people have different kind of love for pitha

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীতকাল মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। সারা বছরে মাত্র দুটি মাস এই ঋতু উপভোগ করতে পারে বাঙালি। আর তাই এই সময়টাকে ঘিরে আনন্দ আর আয়োজনের কমতি থাকে না। শীতে গাছের পাতা ঝরে গেলেও প্রকৃতি একেবারে নিঃস্ব করে রাখেনা বাঙালিকে। এটা খেজুরের রসের মৌসুম। কুয়াশা ঢাকা ভোরে খেজুরের টাটকা রস খাওয়া থেকে শুরু করে এই রসের মাধ্যমে তৈরী নানা উপাদানে শীতকাল হয়ে থাকে জমজমাট। খেজুরের রসের নতুন গুড় দিয়ে তৈরী হয় হাজার রকম পিঠা পুলি। বাংলার ঐতিহ্যে পিঠা একটি ভালোবাসার নাম। সারা বছর বিভিন্ন সময় পিঠা তৈরীর চল থাকে যেমন, নবান্ন, বৈশাখ, যে কোন উৎসব পার্বন। তবু শীতকাল যেন এই আয়োজনের উপযুক্ত মৌসুম। 

বাঙালির দখলে কত প্রকার পিঠা রয়েছে তার হাতে গোনা কোন ফর্দ পাওয়া যাবে না। মূল উপাদান হিসেবে পিঠাতে থাকে চালের গুড়া, গুড় অথবা চিনি, নারিকেল এবং দুধ। ভাবা যায়, কিভাবে এত কম উপাদানে এত প্রকার পিঠা বানিয়ে ফেলা যায়? এলাকা ভেদে অনেক পিঠার উদ্ভাবন হয়েছে আবার এক এক এলাকায় একই পিঠা বিভিন্ন নামেও শোনা যায়। তার মধ্যেই কিছু উল্লেখযোগ্য নাম হল ভাপা, পাটি সাপটা, পুলি, চিতই, পাকান পিঠা বা তেল পিঠা, মেরা পিঠা, নকশি, মালপোয়া, ফুলঝুড়ি, ছিটরুটি ইত্যাদি। শীতের নাড়ু, মুড়ি, মুরকি, ক্ষির, পায়েস ছাড়াও এই ঐতিহ্যবাহী পিঠা পুলি নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

ভাপা পিঠা: ঘরে তোলা নতুন চাল আর শীতের দিনের গরম খেজুর গুড় দিয়ে তৈরী ভাপা পিঠার কোন জুড়ি নেই। পানির ভাপের সাহায্যে তৈরী করা হয় বলে এই পিঠাকে ভাপা পিঠা বলা হয়। কেউ গরম গরম চুলা থেকে নামিয়েই খেতে পছন্দ করে, কেউ আবার আগের রাতের বানানো পিঠা সকাল সকাল ঠান্ডা খেজুর রসের সাথে খেতেও ভালোবাসে। এই পিঠা তৈরীর প্রক্রিয়া একই রকম হলেও নানা রকমভাবে মানুষ এটা খেয়ে থাকে যেমন, শুধু গুড় দিয়ে, গুড়ের পাটালি দিয়ে, নারিকেল মিশিয়ে, আবার ক্ষির বাদামের সমন্বয়ে শাহী স্টাইলে। চালের গুড়া সামান্য লবন আর হালকা গরম পানি দিয়ে শুকনো করে মেখে ছোট বাটির সাইজের যে কোন পাত্র ছাঁচ হিসেবে ব্যবহার করে তাতে তৈরী করতে হয় ভাপা পিঠা। মাঝখানে গুড় বা পাটালি টুকরো করে দিয়ে, কখনও নারিকেল গুড়ের সাথে মিশিয়ে, কখনও গুড়ার সাথে মিশিয়ে পানির ভাপে কিছুক্ষণ সিদ্ধ হবার জন্য রাখলেই ভাপা পিঠা প্রস্তুত হয়ে যায়। শীতের সকালের প্রথম পছন্দের পিঠা হিসেবে ভাপা পিঠাকে দেখলে খুব একটা ভুল হয় না। 

পাটি সাপটা পিঠা: মিষ্টিপাগল মানুষের কাছে পাটি সাপটা খুব জনপ্রিয় একটি পিঠা। চিতই পিটার ব্যাটারের মত করে এই পিঠাতেও ব্যাটার তৈরী করে নিতে হয় তবে সাথে মিশানো হয় সুজি আর মিষ্টি করার জন্য চিনি বা গুড়। এরপর একটা গরম প্যানে হালকা তেল মাখিয়ে তার ওপর নির্দিষ্ট পরিমানে ব্যাটার দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাতলা করা হয়। আলাদাভাবে তৈরী করা পুর যেটা পায়েশ বা ক্ষিরের মত হয়ে থাকে, সেটা মাঝখানে দিয়ে রোলের মত উল্টে উল্টে তৈরী করা হয় পাটি সাপটা। পুলি পিঠার মত করে এই পিঠারও ভেতরের পুর তৈরী করা যেতে পারে নানাভাবে। পাটি সাপটা ডেজার্ট হিসেবে খুব ভালো একটা পিঠা। তাই শুধু শীতেই নই সারা বছর মানুষ অতিথি আপ্যায়নে তৈরী করে থাকে পিঠা।

পুলি পিঠা: পুলি আর এক রকম মজার পিঠা শীতের মৌসুম। এই পিঠা বানাতেও ব্যবহার করা হয় এক রকম ছাঁচ। কেউ কেউ আবার হাতেও তৈরী করে ফেলতে পারে পুলি। চালের গুড়া দিয়ে ডো বানিয়ে রুটির মত বেলে ভেতরে নানান রকম পুর দিয়ে তৈরী করা হয় পুলি পিঠা। এই পুর তৈরীতেই থাকে নানা বৈচিত্র। গুড়ের সাথে কখনও নারিকেল, কখনও তিল আবার কখনও ক্ষিরের মত পুর দিয়ে বানানো হয় মজাদার এই পুলি। শুধু মিষ্টিই নই, ঝালও হয়ে থাকে পুলি পিঠা। তাতে পুর হিসেবে দেওয়া হয় মাংস বা যে যেরকম পছন্দ করে। তৈরী করার প্রকৃয়ার ওপর তাদের নামও নির্ভর করে। পুলি তেলে ভেজে যেমন বানানো যায় ঠিক তেমন ভাপে দিয়েও বানানো যায়। এক এক জনের পছন্দ এক এক রকম। পিঠার সাথে পুলির নামটা খুব দারুণভাবে মিশে আছে। আর এ থেকেই বোঝা যায় পুলি পিঠা কতটা জনপ্রিয়। 

চিতই পিঠা: আজকাল গ্রাম ছাড়িয়ে শহরের পথে পথে শীতের সন্ধ্যায় হরেক রকম ভর্তার সমন্বয়ে চিতই পিঠা দেখতে পাওয়া যায়। চালের গুড়া তরল করে গুলিয়ে স্বাদের জন্য সামান্য লবন মিশিয়ে একটা ব্যাটার তৈরী করা হয় চিতই পিঠার জন্য। এই পিঠার জন্য পাওয়া যায় এক ধরনের ছাঁচ। সেই ছাঁচে হালকা তেল মাখিয়ে গরম অবস্থায় তাতে দেওয়া হয় এই ব্যাটার। নির্দিষ্ট সময় পর পিঠাগুলো তৈরী হয়ে যায় খুব সহজে। এই ব্যাটারেও অনেকে নারিকেল ব্যবহার করে। এরপর পিঠাগুলো খাওয়া হয় শরিষা বাটা, ধনিয়া পাতা বাটা, লাল মরিচ বাটা, ডাল ভর্তা, শুটকি ভর্তা আর নানা রকম শাকের পাশাপাশি হরেক রকম পদে। এই পিঠা বিক্রয়কেন্দ্রে কত রকম ভর্তা পাওয়া যায় চিতই খাবার জন্য সেটা থাকে মূল আকর্ষণে। চিতই এরও রয়েছে নানানভাবে খাবার উপায়। দুধ ঘন করে জ্বালিয়ে বা খেজুরের রসে ভিজিয়ে দিলেই এর নাম হয়ে যায় দুধ চিতই বা ভেজা পিঠা। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়নের জন্য এই পিঠা অসাধারণ। 

পাকান বা তেল পিঠা: আগেই বলেছি এক এক অঞ্চলের মানুষ একই পিঠাকে নানান নামে ডাকে। তেলে ভাজা এই পিঠাও ঠিক তেমন। চালের গুড়ার সাথে কিছু আটা বা ময়দা যোগ করে সামান্য লবন আর মিষ্টির জন্য চিনি বা গুড় দিয়ে ব্যাটার তৈরী করে তেলে ভাজা হয় পাকান বা তেল পিঠা। তেলের মধ্যে ব্যাটার দেওয়ার কিছুক্ষণের ভেতরই লুচির মত ফুলে ওঠে পাকান। এই পিঠাটা একটা সাধারণ পিঠা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের কাছে কম ঝামেলার মনে হওয়ায় প্রায়ই বানিয়ে ফেলা যায় পাকান বা তেল পিঠা। ঘরে গুর বা চিনি আর চালের গুড়া থাকলেই যেন বানিয়ে ফেলা যায় কম সময়ের ভেতর। তবে এই পিঠা ফুলিয়ে তোলার বিষয়টা নির্ভর করে ব্যাটারটা কেমন হলো তার ওপর।

মেরা পিঠা: এটা একটা অসাধারণ পিঠা। কিছুটা চিতই এর মত। ভেজে নেওয়া চালের গুড়োর খামির হাতের মুঠোয় চেপে ভাপে তৈরী করা হয় মেরা পিঠা যা সাধারণত খাওয়া হয়ে থাকে শাক, সবজি বা ভর্তা দিয়ে। মাংসের ঝোল দিয়ে খাবার প্রচলনও অনেক বেশি। মেরা পিঠা হাতের মুঠোয় চেপে বানানোর পাশাপাশি বিভিন্ন আকার দিয়ে তৈরী করা যায়। এ ক্ষেত্রে অনেক রকম ছাঁচ পাওয়া যায় বাজারে, কেউ আবার ঘরেও বানিয়ে নেন পিঠার আকৃতি দেবার জন্য। 

নকশি পিঠা: নকশা করা পিঠাকেই বলে নকশি পিঠা। চালের গুড়া দিয়ে ডো বানিয়ে রুটির মত বেলে তার ওপর খেজুরের কাঁটা দিয়ে বা নকশা করা যায় এমন কিছু দিয়ে কেটে কেটে নানা রকম নকশা ফুটিয়ে তুলে ডুবো তেলে ভাজা হয় নকশি পিঠা। এই পিঠা রসের সিরায় ভিজিয়ে বা পিঠার ওপরেই চিনি ছড়িয়ে দিয়ে খেয়ে থাকে অনেকে। বাঙালি ঐতিহ্যে পিঠার গল্প উঠলে সেখানে নকশি পিঠা থাকেই।

মালপোয়া পিঠা: পাকান বা তেল পিঠার মত মালপোয়া তৈরীর জন্য ব্যাটার তৈরী করে নিতে হয় তসে এতে সামান্য দই ফেটে নিতে হয়। পাকান পিঠার মত তেলে ভাজাও হয় এই পিঠা। কিন্তু ভেজে ভেজে পিঠাগুলো ডুবিয়ে দেওয়া হয় আগে থেকে করে রাখা দুধের তৈরী রসের মধ্যে। কিছুটা দুধ-চিতই এর মত।

ফুলঝুড়ি পিঠা: এই পিঠা তৈরীর জন্য এক ধরনের ছাঁচ পাওয়া যায়। লম্বা শিকযুক্ত এই ছাঁচ তেলে ডুবিয়ে গরম করে নিতে হয়। চালের গুড়া গুড় দিয়ে গুলে কিছটা ঘন ব্যাটার তৈরী করা হয়। সেই ব্যাটারে এই গরম ছাঁচ অর্ধেকটা চুবিয়ে রাখতে হয় কিছুক্ষণ। এরপর আবার তেলে ডুবিয়ে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ফুলঝুড়ি পিঠা তৈরী করতে হয়। এই পিঠা বেশ কিছুদিন বয়ামে রেখে সংরক্ষণ করা যায়। 

ছিটরুটি: খুব মজাদার এই পিঠাটির ব্যাটার প্যানে ছিটিয়ে ছিটিয়ে রুটির মত করে বানানো হয় বলে এর নাম ছিটরুটি। কেউ কেউ বলে ছিটারুটি, কেউ বা ছিটপিঠা। খুব সাধারণভাবে অল্প সময়েই বানিয়ে ফেলা যায় এই শীতের পদটি। চালের গুড়া সামান্য লবন দিয়ে পাতলা ব্যাটার তৈরী করা হয়। এর ভেতরে কখনও কখনও স্বাদের জন্য পাতলা দুধ ও ডিমও দেয় অনেকে। এরপর পাতলা ব্যাটারটা হাত দিয়ে প্যানের ওপর ছিটিয়ে ছিটিয়ে তৈরী করা হয় চিটরুটি। এই রুটি খাওয়া হয়ে থাকে বিভিন্ন মাংসের সাখে, বিশেষ করে হাঁসের মাংস। 

শীতের পিঠাপুলির বর্ণনা অল্প কথায় শেষ করা যায় না। বাঙালির এই ঐতিহ্য বহু বছর ধরে বয়ে চলেছে তার নিজ গতিতে। শীতের পিঠার গল্প উঠলেই অনেকে স্মরণ করেন তাদের ছোটবেলার কথা। নানী বা দাদীর হাতের বানানো গরম গরম পিঠা শীতের উষ্ম রোদে বসে খাওয়ার গল্প যেন প্রত্যেকেরই একটা করে থাকে। বহির্মূখী কাজের চাপে হয়ত অনেকেই এখন এসব বানানোর সময় পান না, তবু এই খাবার বানানো বা পরিবেশন করার বিভিন্ন উপায় ঠিক বের হয়ে যাচ্ছে এখনকার যুগের ভোজন-রসিকদের জন্য। 

Related Post
ডালের বড়া

ডালের বড়া

মসুর ডাল আমাদের রান্নাঘরের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আমাদের সকলের প্রিয় ডালের বড়া...

সর্ষে ইলিশ

সর্ষে ইলিশ

বাংলায় একটি বিখ্যাত প্রবাদ আছে, “মাছে ভাতে বাঙালি”। মাছ বাঙালির দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার...

Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!