কিটোজেনিক বা কিটো ডায়েট

by | জানু. 17, 2023 | Health and Diet

Traditional Khichuri hobe

কিটোজেনিক বা কিটো ডায়েট হলো এক বিশেষ ধরনের খাদ্যাভ্যাস যেখানে শর্করার পরিমাণ কম থাকে এবং চর্বির পরিমাণ থাকে সবচেয়ে বেশি। একটি সাধারণ ডায়েটে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে। তবে এই কিটো ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ সেখানে পাঁচ থেকে দশ শতাংশ। স্বাভাবিক খাদ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চর্বি থাকে যেখানে এই কিটোতে ৭৫ শতাংশ থাকে।

কিটো একটি কম-কার্বোহাইড্রেট এবং উ”চ-চর্বিযুক্ত ডায়েট, যাকে অনেকে ‘মিলিটারি ডায়েট’ হিসাবেও উল্লেখ করে। কিটোজেনিক ডায়েট শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন ‘রাসেল ওয়াইল্ডার’ ১৯২১ সালে মৃগীরোগের চিকিৎসার জন্য। এই শব্দটি তিনিই আবিষ্কার করেছিলেন। মৃগীরোগ বা মৃগীরোগে আক্রান্ত রোগীদের প্রাচীনকাল থেকে ওষুধের পাশাপাশি কিটোজেনিক ডায়েটের পরামর্শ দেওয়া হত যাতে করে কিটোন-বডিগুলি শরীরে যুক্ত হতে পারে। কিটোন-বডি হলো চর্বি বিপাক প্রক্রিয়ার সময় উত্পাদিত তিনটি যৌগের সমষ্টি। এই যৌগগুলির মধ্যে দুটি বিষয় থাকে। একটি, যখন না খেয়ে থাকা হয় তখন শরীর কার্বসের পরিবর্তে শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহার করে। আরেকটি হলো, অ্যাসিটোন যা বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় চর্বিগুলো ভেঙ্গে যায়। যদিও ডায়েটটি রোগের জন্য চালু করা হয়েছিলো, তবু বর্তমান সময়ে দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কিটো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

The Keto diet is very popular nowadays

এই ডায়েটটি অনুসরণ করা বেশ কঠিন। যেহেতু প্রধান খাদ্য হিসেবে আমরা ভাত খেতে অভ্যস্ত, তাই কিটো ডায়েট সম্পর্কিত অন্যান্য নিয়ম কানুন অনুসরণ করা খুবই কঠিন হয়ে দাড়ায়।

Fruits are the sweet saviour in the keto diet

কিটোজেনিক ডায়েটের সময় আপনি যেসব খাবার খেতে পারেন তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল:
মাংস: সব ধরণের লাল মাংস, স্টেক, হ্যাম, সসেজ, বেকন, মুরগি এবং টার্কি
মাছ: সালমন, ট্রাউট, টুনা এবং ম্যাকেরেল
ডিম: চারণভূমি বা ওমেগা-৩, পুরো ডিম
মাখন এবং ক্রিম: তৃণভোজী প্রাণীর দুধ থেকে উৎপন্ন মাখন এবং ভারী ক্রিম
পনির: চেডার, ক্রিম, নীল, বা মোজারেলার মত অপ্রক্রিয়াজাত পনির
বাদাম এবং বীজ: বাদাম, আখরোট, ফ্লেক্সিড, কুমড়ার বীজ ইত্যাদি
স্বাস্থ্যকর তেল: অলিভ অয়েল, কপরা তেল এবং অ্যাভোকাডো তেল
অ্যাভোকাডো: পুরো অ্যাভোকাডো বা সদ্য তৈরি গুয়াকামোল
কম কার্ব সবজি: সবুজ শাকসবজি, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি
মশলা: লবণ, মরিচ, গুল্ম এবং মশলা

কিটো ডায়েটে আপনার যে খাবারগুলি সম্পূর্ণভাবে এড়ানো উচিত তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল:
চিনিযুক্ত খাবার: সোডা, ফলের ক্রাশ, স্মুদি, কেক, আইসক্রিম, ক্যান্ডি ইত্যাদি।
শস্য বা স্টার্চ: গম ভিত্তিক পণ্য, চাল, পাস্তা, সিরিয়াল ইত্যাদি।
ফল: স্ট্রবেরির মতো বেরির ছোট অংশ বাদে সমস্ত ফল
মটরশুটি বা ডাল: মটর, কিডনি মটরশুটি, মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদি।
মূল শাকসবজি এবং কন্দ: আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, পার্সনিপ ইত্যাদি
কম চর্বি বা ডায়েট পণ্য: কম চর্বিযুক্ত মেয়োনিজ, সালাদ ড্রেসিং এবং মশলা
কিছু মশলা বা সস: সস, মধু সরিষা, টেরিয়াকি সস, ক্যাচাপ ইত্যাদি।
অস্বাস্থ্যকর চর্বি: প্রক্রিয়াজাত উদ্ভিজ্জ তেল, মেয়োনিজ ইত্যাদি
অ্যালকোহল: বিয়ার, ওয়াইন, মদ, মিশ্র পানীয়
চিনি মুক্ত খাদ্য: শর্করা মুক্ত ক্যান্ডি, সিরাপ, পুডিং, মিষ্টি, মিষ্টি ইত্যাদি।

The colourful vegetables are important for the keto diet

কিটোজেনিক ডায়েটের কিছু পার্শপ্রতিক্রিয়া রয়ে যায়। সাধারণ এবং মাঝারি ধরনের প্রতিক্রিয়া যেমন, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, অনিদ্রা, ব্যায়াম সহ্য করতে অসুবিধা, শারীরিক দূর্বলতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, কখনও কখনও কিটো ফ্লু হিসাবে সেগুলোকে উল্লেখ করা হয়। এই লক্ষণগুলি অল্প কিছু দিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হয়ে যায়। কার্বোহাইড্রেট কম থাকার কারণে, অনেক ডায়াবেটিস রোগী এই ডায়েট অনুসরণ করে, যা সাময়িকভাবে কাজ করতে পারে কিন্ত দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে। অল্প বয়সে মানুষের শরীরে মেদ কম পরিমাণে জমে। তাই, একটু প্রচেষ্টায় হতে পারে তার সহজ সমাধান। কিন্ত, আজকাল কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ওজন কমানোর এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা কাজ করে। খাবার না খেয়ে থাকার মাধ্যমেই মূলত তারা ওজন কমাতে চায়। যদি অতিরিক্ত ওজন কমানোর প্রয়োজন আসলেই কেউ বোধ করে, তবে একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের সাহায্য নিয়ে সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন পুষ্টিবিদের তত্ত্বাবধানে থেকে কিটো ডায়েট অনুসরণ করা যেতে পারে।

Related Post
Subscribe To Our Newsletter

Subscribe To Our Newsletter

Join our mailing list to receive the latest news and updates from our team.

You have Successfully Subscribed!