“স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”- এই প্রবাদটি শতভাগ সত্য। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তার সুস্বাস্থ্য। ব্যক্তি জীবনে মানুষ যত কিছুই অর্জন করুক না কেন, সুস্বাস্থ্য না থাকলে কোন কিছুই আনন্দময় হবেনা। আর এই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য মানুষকে মেনে চলতে হবে একটি মানসম্মত খাদ্য তালিকা ও করতে হবে শারীরিক পরিশ্রম। স্বাস্থ্যকর খাবার মানে নিজের পছন্দের খাবারকে একদম বর্জন করা তা কিন্ত নয়। তবে সেই খাবার যেন হয় পরিমিত সে বিষয়েও ব্যাপক লক্ষ্য রাখতে হবে। খাদ্য পিরামিড অনুযায়ী খাবার গ্রহণ সাহায্য করতে পারে অস্থি গঠনে, রোগ নিয়ন্ত্রণে কিংবা মানসিক সুস্বাস্থ্য গঠনে! এটি এখন সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য এক বিরাট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে খাবারে অসচেতনতা ও অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের ফলে মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয় মূলত বিশ্ব জুড়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য, যা একটি ক্যাম্পেইন হিসেবে কাজ করে। প্রতিবছর ১৪ই নভেম্বর এই দিবসটি পালন করা হয়। এই দিবসটির উদ্ভাবন করে আইডিএফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে এবং ২০০৬ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৪ই নভেম্বর এটিকে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে পালন করা হবে। মূলত মানুষের মাঝে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সকল তথ্য পৌঁছে দেওয়া, তাদেরকে সকল ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অবগত করাই হল এই দিবসটির মুল লক্ষ্য। বর্তমানে প্রায় ৪৬০ কোটি মানুষ এই রোগে ভুগছেন। ডায়াবেটিস না মানে বয়স, না মানে লিঙ্গ। এটি যেকোন সময়ে যে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে। বর্তমানে বৃদ্ধ ও শিশুরাই এই রোগের বেশি শিকার হচ্ছেন।
ডায়াবেটিস শরীরের এমন একটি অবস্থা যা মানুষের শরীরকে দুর্বল করে দেয়। আমরা প্রতিনিয়ত যে সকল খাবার গ্রহণ করি তা ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তে বহমান থাকে। যখন রক্তে বহমান গ্লুকোজ পরিমানে বেড়ে যায় তখন ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের পরিমাণ বেড়ে গেলেই শরীরের অঙ্গ তখন শক্তি পায় না অথবা এর পরিমাণ কমে গেলেও শরীর নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। ডায়াবেটিস এর কারনে নানা রকম রোগ দেখা দিতে পারে, এমনকি অঙ্গাণু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হৃৎপি-ের বিভিন্ন রোগ, দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা কিংবা বৃক্ক বিকলের ন্যায় কঠিন সমস্যা হতে পারে।
ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য একজন ডায়াবেটিস রোগী যে সকল খাবার গ্রহন করতে পারেন তা হল-
ক. সবজিঃ ব্রকলি, টমেটো, গাজর, ক্যাপসিকাম, আলু ও ভুট্টা।
খ. ফলঃ কলা, আপেল, কমলা, জাম, বাঙ্গি, আঙ্গুর।
গ. শস্যঃ ২৪ঘন্টায় অর্ধেক পরিমাণ খাওয়া যাবে, এছাড়া গম, রুটি ইত্যাদি খাওয়া যাবে।
ঘ. প্রোটিনঃ মুরগির মাংস, চর্বিহীন মাংস, ডিম, মাছ, টফু এবং বাদাম।
ঙ. চর্বিঃ দই ও ল্যাক্টজ বিহীন দুধ।
এইসকল খাবারের পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণ ব্যায়াম খুবই কার্যকর। সকালে দৌড়ানো, শারীরিক ব্যায়াম ও যোগ ব্যায়াম ভীষণভাবে কার্যকর ডায়েবেটিস রোগের জন্য।
প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরেও বিশ্ব ডায়েবেটিস দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। করোনা ভাইরাসের মত মহামারীতে ডায়াবেটিক রোগীরাই বেশী হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। কেননা, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তার মৃত্যু অনিবার্য। এসকল কারণে মানুষকে আরও ভালভাবে অবগত করার জন্যই এই দিবসের আয়োজন করা হয়। করোনা ভাইরাসের মত মৃত্যুমুখী রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ ও অন্যান্য সংস্থা দিনেরাতে কাজ করেই চলেছে।